শুক্রবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

হাড় কাঁপানো শীত

শৈত্যপ্রবাহের কবলে আট জেলা, দুজনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

হাড় কাঁপানো শীত

কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডায় ভোগান্তিতে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

শৈত্যপ্রবাহের কবলে দেশের আট জেলা। এই শৈত্যপ্রবাহ আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। পৌষের মাঝামাঝি এসে টানা কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা কমায় শীত ও কুয়াশার দাপট বেড়েছে। দিনের অল্প যেটুকু সময় কুয়াশা ভেঙে সূর্যের দেখা পাওয়া যায়, তার বাইরে সারা দিনই গরম কাপড় গায়ে চাপিয়ে থাকতে হচ্ছে।

দেশজুড়ে চলছে কুয়াশার দাপট; ভরদুপুরেও মিলছে না রোদের দেখা।

থার্মোমিটারের পারদ ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে গিয়ে দেশের আট অঞ্চলে শুরু হয়েছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। গতকাল যশোরে দেশের সর্বনিম্ন ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সারা দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ থেকে ১৬ ডিগ্রির মধ্যেই ছিল।

দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ায় গত কয়েকদিন ধরে সারা দেশেই অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত। কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিম বাতাসে নাকাল হতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষকে। হাসপাতালে বেড়েছে ঠান্ডা রোগীর ভিড়। সকাল সকাল কাঁপতে কাঁপতে স্কুলমুখী হচ্ছে স্কুল শিক্ষার্থীরা। নগরীর শ্রমজীবী আর পেশাজীবীরাও গায়ে মোটা কাপড় জড়িয়ে ছুটছেন গন্তব্যে।

আবহাওয়াবিদ আবদুল হামিদ মিয়া জানান, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, নীলফামারী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের ওপর দিয়ে বৃহস্পতিবার মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা অব্যাহত থাকবে। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড          করা হয়েছে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর টেকনাফের ২৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। তিনি বলেন, সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি হচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। বড় এলাকাজুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, নীলফামারী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই শৈত্যপ্রবাহ আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে এক অজ্ঞাত কিশোরের (১৩) মরদেহ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। গত বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে স্টেশন সংলগ্ন তাজমহল হোটেলের বিপরীতে সড়কে মৃত অবস্থায় পরে থাকা ওই লাশ উদ্ধার করা হয়।

নিহতের পরনে গোল গলা গেঞ্জি ও পায়জামা রয়েছে। শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। প্রাথমিক ভাবে ঠান্ডা এবং ঠিকমতো খাবার না পাওয়ার কারণে ওই মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

টঙ্গী রেলস্টেশনের দুই নম্বর প্ল্যাটফরম থেকে এক বয়স্ক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে ঘুমন্ত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালের দিকে ২ নম্বর প্ল্যাটফরম থেকে ওই ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে টঙ্গী রেলস্টেশন পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) কামাল হোসেন। নিহতের নাম ঠিকানা এখনো জানতে পারেনি পুলিশ। তার বয়স আনুমানিক ৬০ বছর। হাড় কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে বরিশালে। গত ৪ দিন ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ওঠানামা করছে ১১ ডিগ্রি থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। উত্তরের হিমেল হাওয়া, মেঘলা আবহাওয়া এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কম থাকায় বরিশালে বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।

কুয়াশা আর হিমেল বাতাসের কারণে দিনাজপুরে হাড় কাঁপানো কনকনে শীতে বিপর্যস্ত এ জনপদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। দিনাজপুরসহ এ অঞ্চলের মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুগুলো কনকনে ঠান্ডা আর হিমেল হাওয়ায় কাহিল হয়ে পড়েছে। ঘন কুয়াশা ও প্রচ- ঠান্ডায় নাকাল হয়ে পড়েছে গবাদিপশুগুলো। এসব গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে খামারিসহ কৃষকরা।

দেশের সর্বউত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ে শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। উত্তরের হিমবায়ুর প্রভাবে এই জেলায় বাড়ছে শীতজনিত রোগ। নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষের আয় রোজগার কমেছে। প্রচ- ঠান্ডা ঠেকাতে কয়েকটি কাপড় গায়ে দিতে হচ্ছে। দিনের বেলা দুপুর পর্যন্ত কুয়াশায় আবৃত্ত থাকছে সবকিছু। হেড লাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন। দুপুরের পর রোদের দেখা মিললেও শীতের প্রভাবে উত্তাপ ছড়াতে পারছে না সূর্য। হিমালয় পাহাড় থেকে বয়ে আসা হিমবায়ু প্রভাহিত হচ্ছে দিনভর। এই বাতাশে শীতের প্রকোপ আরও বেড়ে যাচ্ছে।

উত্তরের নীলফামারী জেলায় শীত জেঁকে বসেছে। কনকনে ঠান্ডা আর হিম বাতাসের কারণে কমছে তাপমাত্রা। গত কয়েকদিন ধরে নিম্নমুখী তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। ঘনকুয়াশায় ঢাকা পড়ছে সমগ্র জনপদ। সূর্যের দেখা মিলছে বেলা ১২টার পর। ফলে মানুষের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। চরম বিপাকে পড়েছেন কর্মজীবী ছিন্নমূল ও শ্রমজীবী মানুষ।

এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে উড়োজাহাজের ওঠানামা বিঘিœত হচ্ছে। ফলে প্রায় প্রতিদিনই দিনের প্রথম প্রহরে উড়োজাহাজের শিডিউল ঠিক থাকছে না। সকালে ঘন কুয়াশার কারণে রানওয়ে দৃষ্টিসীমার আড়ালে থাকায় ফ্লাইট চলাচল বিঘিœত হচ্ছে বলে জানায় স্থানীয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। 

কুড়িগ্রামে ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠান্ডায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেলেও বৃহস্পতিবার থেকে ফের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে। কিন্তু জনদুর্ভোগ কমেনি। প্রতিদিন বিকাল থেকে শুরু করে পরদিন সকাল ১১টা পর্যন্ত কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে গোটা জনপদ। দুপুরের আগে সূর্যের দেখা  মেলে না। কুয়াশার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উত্তরীয় হিমেল হাওয়া। ফলে ঠান্ডায় স্থবির হয়ে পড়েছে এ জেলার জনজীবন। এ অবস্থায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষজন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর