সোমবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
রাজপথের রাজনীতি

আজ মহানগর ও উপজেলায় বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন করছে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো। তৃতীয় ধাপের কর্মসূচি হিসেবে আজ সারা দেশের মহানগর ও উপজেলায় মিছিল-সমাবেশ করা হবে। এই কর্মসূচি সফল করতে বিভিন্ন দল ও অঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে ইতোমধ্যে বৈঠক করেছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। আজ ঢাকায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বেলা ২টায়  বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হবে। এ বিষয়ে অবহিত করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার বরাবর চিঠিও দিয়েছে দলটি। চতুর্থ ধাপের নতুন কর্মসূচি হিসেবে ২৫ জানুয়ারি ‘কালো পতাকা প্রদর্শন’, ‘বিক্ষোভ মিছিল’, মানববন্ধন কিংবা পেশাজীবী সমাবেশ পালন করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে। গত ১১ জানুয়ারি নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি থেকে সরকারের পদত্যাগ, খালেদা জিয়া ও নেতা-কর্মীদের মুক্তিসহ ১০ দফা এবং বিদ্যুতের দাম কমানোর দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই কর্মসূচি পৃথকভাবে পালনের ঘোষণা দিয়েছে সাত দলের গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২-দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, চার-দলীয় বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য, এলডিপি এবং ১৫টি সংগঠনের সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট। এ ছাড়া মোস্তফা মোহসিন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরাম বিএনপির বিক্ষোভ-সমাবেশের প্রতি সংহতি জানিয়েছে। গতকাল এক সভা শেষে মোস্তফা মোহসীন মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার ভিত্তিতে এই সরকারের পদত্যাগ দাবি ও বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিল ও সমাবেশে একাত্মতা প্রকাশ করছে গণফোরাম।

সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন, খালেদা জিয়া ও নেতা-কর্মীদের মুক্তিসহ ১০ দফা এবং বিদ্যুতের দাম কমানোর দাবিতে আজ নয়াপল্টনে বিক্ষোভ-সমাবেশ করবে বিএনপি। এ বিষয়ে অবহিত করে গত বৃহস্পতিবার ডিএমপি কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে দলটি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে আজকের বিক্ষোভ-সমাবেশে দলের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থাকবেন। এ নিয়ে শনিবার বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য এবং জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বৈঠকে নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, যুগপৎ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই একনায়কতন্ত্র সরকারের পতন ঘটাতে হবে। আমাদের জোট রাজনীতি বিলীন হয়ে যায়নি বরং যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে সব রাজনৈতিক দল ও জোট আরও সুদৃঢ় হবে। চলমান আন্দোলন আরও বেগবান করতে সমমনা জোটসহ সব রাজনৈতিক শক্তিকে এগিয়ে আসতে হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য দেশপ্রেমিক সব দলকে আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে বিদ্যুতের মূল্য কমানো এবং রাজনৈতিক বন্দি মুক্তির দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করবে সাত দলের গণতন্ত্র মঞ্চ। তবে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সামনে সকাল ১১টায় এই কর্মসূচি পালনের কথা জানিয়েছিল গণতন্ত্র মঞ্চ। একই দাবিতে আজ দুপুর ২টায় রাজধানীর পূর্ব পান্থপথে এফডিসি সংলগ্ন এলডিপির কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি। বিক্ষোভ মিছিলটি এলডিপি কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে মালিবাগ মোড়ে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। মিছিলে নেতৃত্ব দিবেন এলডিপির মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী ড. রেদোয়ান আহমদ। এ সময় এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া আজ চট্টগ্রাম মহানগরে বিক্ষোভ-সমাবেশ করবে ১২-দলীয় জোট। জোটের নেতা অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা এই তথ্য জানিয়ে বলেন তারা ঢাকায় বিক্ষোভ-সমাবেশ করবেন এবং উভয় কর্মসূচি সফলে তাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ জানান, তারা আজ সোমবার দুপুর ২টায় পুরানা পল্টনের প্রীতম হোটেলের উল্টো দিকে আল-রাজী ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল করবেন। এ ছাড়া যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ-সমাবেশ করবে চার-দলীয় জোট বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য।

কর্মসূচি নেই জামায়াতের : যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আজ একযোগে কর্মসূচি পালন করলেও জামায়াতে ইসলামী গতকাল পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেনি। তবে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদসহ বিভিন্ন দাবিতে শনিবার রাজধানীসহ সারা দেশের মহানগর ও জেলায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে দলটি। জানা গেছে, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। দলের আমিরকে গ্রেফতার ও যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গণমিছিল করতে গিয়ে মালিবাগে শতাধিক নেতা-কর্মী গ্রেফতার ও আহত হওয়ার ঘটনায় বিএনপি কোনো মন্তব্য করেনি। যে কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে ১১ জানুয়ারি গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন না করে তারা আলোচনা সভা করেছে।

‘সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট’ : বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবির পাশাপাশি গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রতিবাদে আরামবাগ পুলিশ বক্সের উল্টা দিক থেকে সকাল ১১টায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করবে সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট। সভাপতিত্ব করবেন জোটের সমন্বয়কারী মুহাম্মদ সাইদুর রহমান।

পরবর্তী কর্মসূচি ২৫ জানুয়ারি : যুগপৎ আন্দোলনের চতুর্থ ধাপের কর্মসূচি হিসেবে ২৫ জানুয়ারি ‘কালো পতাকা প্রদর্শন’, ‘বিক্ষোভ মিছিল’, মানববন্ধন কিংবা পেশাজীবী সমাবেশ পালন করা হবে। ২৫ জানুয়ারি ‘বাকশাল দিবস’ হিসেবে পালনের জন্যই ওই দিনটিকে ঘৃণা প্রদর্শনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে বলে বিএনপি ও বিভিন্ন জোট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর