বুধবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বখাটের মারধরে রক্তাক্ত ছাত্রী, বাড়ি ফিরে ঝুলন্ত লাশ

পাবনা প্রতিনিধি

পাবনার বেড়া উপজেলায় কলেজে যাওয়ার পথে বখাটের মারধরের শিকার এক ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ পাওয়া গেছে। গতকাল বেলা ২টার দিকে নিজ ঘরের দরজা ভেঙে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় সুস্মিতা খাতুন (১৮) নামে ওই ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করেন স্বজনরা।

সুস্মিতা বেড়া সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। বেড়া পৌর এলাকার মৈত্রবাঁধা মহল্লার চায়ের দোকানি জাইদুল হোসেনের বড় মেয়ে তিনি। সাঁথিয়া উপজেলার সোনাতলা গ্রামের আশিক হোসেনের (২০) বিরুদ্ধে তাকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে। ঘটনার পর থেকে আশিককে আটকের চেষ্টা করছে পুলিশ। স্বজন ও সহপাঠীদের সূত্রে জানা যায়, আশিকের সঙ্গে একসময় বন্ধুত্ব ছিল সুস্মিতার। মাস তিনেক আগে আশিকের বখাটেপনা ও নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের খবর জানতে পেরে সুস্মিতা যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আশিক। গতকাল সকালে সুস্মিতা কলেজে যাওয়ার জন্য কয়েক বন্ধুসহ বাড়ি থেকে বের হন। কলেজের কাছে পৌঁছানোর পর হঠাৎই আশিক তাদের পথ রোধ করে দাঁড়ান। এ সময় সুস্মিতা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলেও আশিক তাকে জোর করে রিকশায় তুলে নিয়ে যান। সহপাঠীরা দুপুর ১২টার দিকে দেখেন সুস্মিতা রক্তাক্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে কাঁদছেন। এ সময় বেশ কিছুটা দূরে আশিক দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরে সহপাঠীরা রিকশায় করে সুস্মিতাকে বাড়ি নিয়ে আসেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, বাড়ি ফিরে সুস্মিতা মাসহ স্বজনদের জানান আশিক তাকে বেদম মারধর করে রক্তাক্ত করেছেন। একপর্যায়ে তিনি ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। দীর্ঘ সময় তার সাড়া না পেয়ে স্বজনরা ঘরের দরজা ভেঙে ঢুকে দেখেন, সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস নিয়েছেন। বাড়ির লোকজন দ্রুত তাঁকে নামিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর থেকে বাড়িতে আহাজারি করছেন সুস্মিতার মা পলি খাতুন। দরিদ্র বাবার চায়ের দোকানের সামান্য আয়ে তাদের সংসার চলে। সুস্মিতা বড় মেয়ে। ছোট মেয়ে সুবর্ণা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। সুস্মিতার বাবা স্বপ্ন দেখেছিলেন দুই মেয়েকে পড়ালেখা শিখিয়ে স্বাবলম্বী করবেন; কিন্তু এক বখাটের কারণে তার মেয়ের এভাবে চিরতরে বিদায় নেওয়ার বিষয়টি তারা মানতে পারছেন না। ঘটনার সময় সুস্মিতার সঙ্গে থাকা তার বান্ধবী জানান, সুস্মিতা সব সময়ই আশিকের ভয়ে থাকতেন। রিকশায় বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় সুস্মিতা তাদের জানিয়েছিলেন আশিক তাকে ব্যাপক মারধর করেছেন। বেড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য সুস্মিতার লাশ পাবনা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। তবে ইতোমধ্যে আশিককে ধরার জন্য অভিযান চলছে। শিগগিরই তাকে ধরার আশা করছেন ওসি।

 

সর্বশেষ খবর