বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে হেলে গেছে চার তলা ভবন

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে হেলে গেছে চার তলা ভবন

চট্টগ্রামের মাদারবাড়ী এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চলাকালে খালের পাশের দুটি ভবন, একটি মন্দির ও একটি কাঁচা ঘর হেলে পড়েছিল। ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর রাতে ঘটা ওই ঘটনায় ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে শুরু হয় হইচই। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। প্রায় এক বছর পর আবারও গতকাল একটি চারতলা ভবন হেলে পড়েছে। এ নিয়েও শুরু হয়েছে অতীতের পুনরাবৃত্তি। কিন্তু ১২ বছর আগে চুয়েটের করা তালিকাটিই এখন হিমাগারে।

নগরের ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙার দায়িত্ব চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক)। 

নগরবাসীর অভিযোগ, যে যেখানে যেমন ইচ্ছা ভবন নির্মাণ করছে। বিল্ডিং কোড মানার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। কর্তৃপক্ষও বিষয়টি নিয়ে যথাযথ মনিটরিং করে না। ফলে নির্মাণ হচ্ছে অনুমোদনহীন ভবন। থেকে যাচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা। ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে শঙ্কা। 

গতকাল চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর রেলস্টেশনের পাশে ফেরদৌস প্লাজা নামে একটি চারতলা ভবন হেলে পড়েছে বলে জানা গেছে। ওই ভবনের পাশে অবস্থিত চশমা খালে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণের জন্য খননকাজ চলাকালীন এ ঘটনা ঘটে বলে দাবি ভবন মালিকের। ভবনটির বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ভবনের নিচতলায় দোকান, দ্বিতীয়তলায় দাঁতের চিকিৎসকের চেম্বার, তৃতীয়তলায় আইটি ফার্ম ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং চতুর্থতলায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের (৩৫তম ব্যাচ) অফিস। ভবনের বাসিন্দারা বলেন, সকালে জানতে পারি ভবন হেলে পড়ার কথা।

ভবন মালিক খোরশেদ আলম বাপ্পী বলেন, কিছুদিন আগে ভবনের পাশের নালা সম্প্রসারণের জন্য ২১ ফুট পর্যন্ত ভেঙে ফেলা হয়। কিন্তু ভবনের নিচে কিছু অংশ ফাঁকা থেকে যায়, ফলে চারটা পিলার ভেঙে গেলে ভবনটি নালার দিকে হেলে পড়ে। তিনি বলেন, এটি পারিবারিক ভবন। ১৯৮৬ সালে নকশা অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল। সোয়া দুই কাঠা জমির ওপর ১৯৯০ সালে চারতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজের জন্য তাদের ভবনের একাংশ ১০ দিন আগে ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখন যেটুকু আছে, তাও হেলে পড়েছে।

পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাদেকুর রহমান বলেন, ভবনের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। চউকের প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস বলেন, বিধিমালা মতে, খালের ১৫ ফুট দূরে ভবন নির্মাণ করতে হয়। কিন্তু ভবনটির মালিক তা মানেনি। দুই বছর আগেই ভবনের মালিককে নোটিস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা তা আমলে নেয়নি। এখন আমরা ভবনটির বিষয়ে চসিককে নোটিস দেব। তারা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে। তিনি বলেন, নগরে কত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আছে তার হিসাব চউকের কাছে নেই। অনেক আগে একটি তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী চসিক কয়েকটি ভবনও ভাঙে। চসিকের ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, আমি এখানে এক বছর আগে যোগ দিয়েছি। এই সময়ের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকার বিষয়ে কোনা আলোচনা হয়নি। তালিকাটিও আমি দেখিনি। তবে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে। 

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে নীরব : চট্টগ্রাম নগরের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে চউক এবং চসিকের কার্যকর কোনো ভূমিকা বা উদ্যোগ দেখা যায় না। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা প্রণয়নে কোনো উদ্যোগও নেই। প্রধান দুই সংস্থাই নীরব। তবে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় ২০০৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সময়ে ৫৭টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করে একটি তালিকা প্রণয়ন করেছিল। ওই তালিকা ২০১১ সালে চউক চসিককে বুঝিয়ে দেয়। কার্যত এরপর আর কোনো তালিকা তৈরি করা হয়নি। চসিক ওই তালিকা ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মাত্র তিনটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙে। এরপর থেকে তালিকাটিই হিমাগারে পড়ে আছে। বারবার ভবন হেলে পড়ার ঘটনা ঘটলেও কোনো সংস্থাই এ নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না। চসিক-চউকের কাছে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা না থাকলেও চুয়েটের ২০১১ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের ১ লাখ ৮২ হাজার ভবনের মধ্যে ১ লাখ ৪২ হাজার ভবনই ভূমিকম্প ঝুঁকিতে আছে।

ঘটছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হেলার ঘটনা : চট্টগ্রাম নগরে ভবন হেলে পড়ার ঘটনা বাড়ছেই। ২০২১ সালের ১০ এপ্রিল রাতে নগরের এনায়েত বাজার গোয়ালপাড়া এলাকায় কার্তিক ঘোষের মালিকানাধীন একটি পাঁচতলা ভবন হেলে পড়ে। ২০২১ সালের ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর ও চকবাজার কাপাসগোলা এলাকায় ভূমিকম্পের পর হেলে পড়ে দুটি ভবন। এর আগে ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল রাতের ভূকম্পনে নগরের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বি-ব্লকের ৮ নম্বর সড়কে হেলে পড়ে শিরিন নিকেতন নামের ছয়তলা একটি ভবন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর