শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

গোমতী এখন মাটিকাটা নদী!

ভাঙছে সড়ক, ধুলায় ধূসর চারপাশ

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

গোমতী এখন মাটিকাটা নদী!

গোমতী থেকে দিনদুপুরে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। দেখার যেন কেউ নেই -বাংলাদেশ প্রতিদিন

গোমতী এখন মাটিকাটা নদী। মাটিবাহী ট্রাকের চাপে ভেঙে পড়ছে সড়ক। ধুলায় ধূসর চারপাশ। বিপন্ন পরিবেশ। উর্বরতা কমে যাওয়ায় কমছে সবজি উৎপাদন।

সূত্র জানায়, গোমতী নদীর দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার। উৎপত্তিস্থলসহ ১৭ কিলোমিটার ভারতের ত্রিপুরা অংশে প্রবহমান। বাকি ১০৩ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়েছে কুমিল্লার পাঁচ উপজেলা- আদর্শ সদর, বুড়িচং, দেবিদ্বার, মুরাদনগর ও দাউদকান্দি দিয়ে। এই ১০৩ কিলোমিটার অংশের চরজুড়ে আবাদ হতো সবজি ও ফলমূল। জেলার শীতকালীন সবজির আগাম চাহিদা মিটত এই গোমতী চরের ফসলে। কিন্তু মাটি কাটার কারণে উর্বরতা হারাচ্ছে এসব চর। নদীর আদর্শ সদর ও বুড়িচং এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, সদর উপজেলার টিক্কারচর থেকে বুড়িচংয়ের ভান্তীর চর পর্যন্ত এলাকার চর ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। পুরো চরই কেটে নিয়ে গেছে। অতিরিক্ত মাটিবাহী ট্রাকের চাপে নদীর দুই পাশের সড়ক ভেঙে পড়ছে। পিচ উঠে গিয়ে সেখানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় কেটে ফেলা হয়েছে বেড়িবাঁধ। সারারাত ধরে মাটি কাটা চললেও অনেক স্থানে দিনেও মাটি কাটতে দেখা গেছে। নদীর বেশ কিছু পয়েন্টে ট্রাকবোঝাই করে মাটি কেটে নেওয়ার দৃশ্য চোখে পড়েছে। গোমতীর দুই বাঁধে ট্রাকের শব্দ ও ধুলার রাজত্বে দিশাহারা এসব এলাকার মানুষ। বুড়িচংয়ের বাবুবাজার এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম জানান, স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধির যোগসাজশে ভূমি মালিকদের থেকে চরের জায়গা কিনে নেন ইটভাটার মালিকরা। সেসব চরের মাটি কাটা হয় ভেকু মেশিন দিয়ে। মাটি এমন গভীরভাবে কাটা হয়, যেন পাশের ভূমিও ভেঙে পড়ে। যার কারণে বাধ্য হয়ে মাটি বিক্রি করে দেন ভূমি মালিকরা। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, নাগরিক সংগঠনের ব্যানারে গোমতী নদী, লালমাই পাহাড়, জলাশয় রক্ষায় জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দফতরে দাবি উত্থাপন করছি। কিন্তু তার পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের তাগাদা অনুভব করেনি প্রশাসন। প্রশাসনের লাগাতার ব্যর্থতা ও দায়িত্বহীনতার জন্য গোমতীতে আজ এই দস্যিপনা। এটিও লালমাই পাহাড়ের মতো ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় এমন ব্যর্থতার দায় প্রশাসন এড়াতে পারে না। পরিবেশ অধিদফতর কুমিল্লার উপরিচালক মোসাব্বির হোসেন বলেন, মাটি কাটাসহ গোমতী নদীর অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করছি। শিগগিরই অভিযান পরিচালিত হবে। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, আমরা গোমতীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছি। আজও আমাদের মোবাইল টিম কাজ করছে। নদী ও এর চারপাশের পরিবেশ সুরক্ষায় আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর