শনিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

হলিডে মার্কেটে উৎসবের আমেজ, বাড়ছে ক্রেতা

রাশেদ হোসাইন

হলিডে মার্কেটে উৎসবের আমেজ, বাড়ছে ক্রেতা

রাজধানীর মতিঝিলে সড়কে হরেক রকম পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। ক্রেতারা তাদের পছন্দের পণ্য কিনতে ভিড় করছেন দোকানগুলোতে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

তহুরা বানু নওগাঁ থেকে ঢাকায় আসেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) উদ্যোক্তাদের মেলা উপলক্ষে। ব্যবসা কেমন চলছে বলায় স্মিথ হাসি দিয়ে বললেন, সব মিলিয়ে ভালোই চলছে। এখানে প্রতিযোগিতার বাজার, লাভ কম হয় তবে সেল বেশি। সব মিলিয়ে মেলায় এসে নতুন অভিজ্ঞতা পাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, আমার এখানে ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বড়দের, সবার জন্য বাটিক আইটেম পাওয়া যায়। রাজশাহী বলাকা সিল্ক, মনিপুরি জামদানি, টাঙ্গাইল তাঁত, কুমিল্লার সিল্ক ও নরসিংদীর বাটিক এসব পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। বিকালের দিকে যখন ভিড় বাড়ে, তখন সব সামলাতে একজনের প্রয়োজন হয়। তাদের আলাদা টাকা দিতে হয়। গত সপ্তাহের দুই দিনে মেলায় আমার ৪৫ হাজারেরও বেশি টাকা বিক্রি হয়েছে। খরচ উঠে গেছে। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে কষ্ট হয়। বর্তমানে মেলায় ৫ হাজার টাকা করে ফি দিতে হয়। এই টাকা ২/৩ হাজার হলে ভালো হতো। আমার এখানে পুতুলের জুতা ও কুসি পণ্য বেশি বিক্রি হয়। তবে জামদানি ও তাঁতের প্রতি মানুষের ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

রামপুরা থেকে মেলায় আসেন ক্রেতা আয়েশা ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা অন্য জায়গায় আর্কিডের ওসমোক সার বা এনপিকে সার যা বাইরে খুঁজে পাই না। মেলায় এসে পেয়ে গেলাম, খুবই ভালোই    লাগছে। এখানে তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যাচ্ছে সব কিছু। আগারগাঁও ৬০ ফুট এলাকা থেকে সস্ত্রীক সাদমান মেলায় আসেন। তিনি বলেন, ‘যেটা ভালো লাগে তা ক্রয় করব। এখনো পছন্দের তালিকা করা হয়নি। ভালো জিনিস সামনে পেলে ক্রয় করব।’ বিক্রেতা মনির হোসেন সাবাব লেদার থেকে এসেছেন। ঢাকা হাজারীবাগ মূল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তিনি বলেন, ‘আমাদের সব কিছু লেদারের। সাইড ব্যাগ থেকে শুরু করে অফিস ব্যাগ, পার্টস, কার্ড হোল্ডার, ব্যাক প্যাক, ল্যাপটপ ব্যাগ এসব কিছু আমরা বিক্রি করছি। এখানে এসে নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে। ভালোই সাড়া পাচ্ছি। আমাদের এখানে সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা দামের পণ্য আছে।’ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চলছে এই হলিডে মার্কেট। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) উদ্যোক্তাদের পণ্য নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে গত সপ্তাহে চালু হয়েছে ‘হলিডে মার্কেট’। ডিএনসিসি ও ঐক্য ফাউন্ডেশনের যৌথ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) উদ্যোক্তাদের পণ্য নিয়ে পরীক্ষামূলক প্রকল্প হিসেবে মার্কেটটি চালু করা হয়েছে। মার্কেটটি বসেছে আগারগাঁওয়ের শেরেবাংলা নগরের পর্যটন ভবন থেকে নির্বাচন কমিশন ভবন পর্যন্ত বিস্তৃত সড়কে। এটি আইসিটি সড়ক নামে পরিচিত। প্রতি সপ্তাহের ছুটির দিনে (শুক্র-শনিবার) সড়কটির উত্তর ও দক্ষিণ-দুই পাশের বিস্তৃত গাড়ি পার্কিংয়ের স্থানে মার্কেটের এই স্টল বসছে। হলিডে মার্কেটের শুরু প্রান্তে রয়েছে একটি ‘কালচারাল কর্নার’। মেলায় আগত ক্রেতাদের বিনোদনের জন্য বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যারা মার্কেটে আসছেন, তারা পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে এখানে মন খুলে সাংস্কৃতিক যে কোনো পরিবেশনা করতে পারছেন। গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে, সড়কের দুই পাশে ৫০টি করে মোট ১০০টি স্টল বসানো হয়েছে। তবে এখনো কিছু স্টল খালি পড়ে আছে। স্টলগুলোতে এসএমই উদ্যোক্তাদের চামড়াজাত, পাটজাত, লাইফস্টাইল, ফ্যাশন, হোম ডেকর, হস্তশিল্প, অর্গানিক, কৃষি ও খাদ্যপণ্য রয়েছে। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য রয়েছে নার্সারি। এসএমই পণ্যের প্রচার, প্রসার ও বাজারজাতকরণ অনলাইন মার্কেটিং কাজ করছে। হলিডে মার্কেটে চামড়াজাত পণ্য, পাটজাত পণ্য, হস্তশিল্প, ফ্যাশন ও লাইফ স্টাইল পণ্য, হোমডেকর পণ্য, অর্গানিক কৃষিপণ্য, পার্বত্য অঞ্চলের কৃষিপণ্য ছাতার নিচে পাওয়া যাচ্ছে।

খন্দকার হাবীবুল্লাহর স্টলের নাম ‘কৃষিবিদ উপকরণ নার্সারি’। তিনি বলেন, ‘আমার এখানে আছে ইউরিয়া সার, টিএসপি, ড্যাপ সার, প্লাস্টিকের টব বিভিন্ন ধরনের গাছের ওষুধ। ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।’ মেলা নিয়ে ঐক্যের পরিচালক আ স ম মাহমুদুল হাসান খন্দকার বলেন, ‘উদ্যোক্তাদের উন্নয়নের জন্য এই মেলা আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় নতুনদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এখানে আগত ক্রেতাদের বিনোদনের জন্য সন্ধ্যার দিকে মিউজিক শো-এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। গত সপ্তাহের দুই দিনে আমাদের এখানে ১৫ লাখ টাকার মতো বিক্রি হয়েছে। মেলায় ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। মেলায় স্টল ফি বেশি মনে হলেও অনেক ধরনের খরচের সঙ্গে সমন্বয় করে এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর