রবিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

আদেশের পরও স্ট্যান্ড রিলিজ নেই পুলিশে

মাহবুব মমতাজী

বদলির আদেশ মানছেন না পুলিশের অনেক কর্মকর্তা। পুলিশ সদর দফতর থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের আদেশ দেওয়া হয়। অন্যথায় স্ট্যান্ড রিলিজ কিংবা তাৎক্ষণিক অবমুক্ত হিসেবে গণ্য করার কথা বলা হয়। এর পরও ১১ পুলিশ কর্মকর্তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়নি।

গত বছর জারি করা অন্তত আটটি বদলির আদেশ পর্যালোচনা করে এসব তথ্য জানা গেছে। এসব বদলির আদেশে স্ট্যান্ড রিলিজের কথা বলা আছে। স্ট্যান্ড রিলিজ করা মানে পুরনো কর্মস্থলের বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়া। তবুও ওইসব কর্মকর্তা আদেশের তিন মাস পরও পুরনো কর্মস্থলের বেতন-ভাতা ভোগ করছেন। কীভাবে এবং কোন নীতিমালায় তা ভোগ করছেন এ নিয়ে খোদ পুলিশেরই অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। যদিও তারা এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (প্রশাসন) খন্দকার লুৎফুল কবিরের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি এ প্রতিবেদকের কাছে বদলির আদেশ না মানা কর্মকর্তাদের তালিকা চান। একই সঙ্গে বলেন, ওই তালিকা দেখে তিনি বিধিবিধান অনুসারে কথা বলতে পারবেন।

পুলিশ সদর দফতরের ওয়েবসাইটে পাওয়া বদলির প্রজ্ঞাপনগুলোর মধ্যে গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর ছিল একটি। ওই প্রজ্ঞাপনে মোট ১২ জনকে বদলি করা হয়। এদের মধ্যে র‌্যাবে কর্মরত থাকা সহকারী পুলিশ সুপার জি এম মাজহারুল ইসলামকে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ সার্কেলে বদলি করা হয়। কিন্তু তিনি এখন পর্যন্ত নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেননি। অথচ তাকে ৪ অক্টোবর থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ হিসেবে গণ্য হবে বলে উল্লেখ করা হয়। খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর একটি প্রজ্ঞাপনে পাঁচজনকে বদলি করা হয়। এদের মধ্যে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল আওয়াল চৌধুরীকে কক্সবাজারের অষ্টম এপিবিএনে বদলি করা হয়। কিন্তু তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগ দেননি। তাকে গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ হিসেবে গণ্য হবে বলে উল্লেখ করা হলেও তিনি পুরনো কর্মস্থলেই আছেন। একই দিন পৃথক প্রজ্ঞাপনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ১২ জনকে বদলি করা হয়। এদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এ এম ফজল-ই-খুদা এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমাকে কক্সবাজারের ১৪ এপিবিএনে বদলি করা হয়। আর রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার একরামুল হককে অষ্টম এপিবিএনে বদলি করা হয়। এই তিনজনের কেউই তাদের নতুন কর্মস্থলে যোগ দেননি। তাদের ২০ সেপ্টেম্বর থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ হিসেবে গণ্য করার কথা থাকলেও তারা পুরনো কর্মস্থলেই আছেন। গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর একটি প্রজ্ঞাপনে ১১ জনকে বদলি করা হয়। এরমধ্যে কুষ্টিয়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতিকুল ইসলামকে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশে বদলি করা হয়। তিনিও নতুন কর্মস্থলে যোগ দেননি। অথচ তাকে ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ হিসেবে গণ্য করার কথা ছিল। একই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর আরেকটি প্রজ্ঞাপনে আটজনকে বদলি করা হয়। এর মধ্যে র‌্যাবে কর্মরত সহকারী পুলিশ সুপার নিত্যনন্দ দাসকে নোয়াখালীর চাটখিল সার্কেলে বদলি করা হয়। চাটখিল থানায় যোগাযোগ করে জানা যায়, পুলিশের এই কর্মকর্তা এখনো সেখানে যোগদান করেননি। তাকে গত বছরের ৬ অক্টোবর থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ হিসেবে গণ্য করার কথাও উল্লেখ করা হয়েছিল ওই প্রজ্ঞাপনে। ২৬ সেপ্টেবর পুলিশ সদর দফতর থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে ১১ জনকে বদলি করা হয়। এদের মধ্যে নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাবিনা ইয়াসমিনকে বগুড়ার চতুর্থ এপিবিএনে বদলি করা হয়। বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেলেনা আক্তারকে বগুড়ার ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে বদলি করা হয়। আর নড়াইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম কামরুজ্জামানকে বরিশাল মহানগর পুলিশে (বিএমপি) বদলি করা হয়। তারা তাদের নতুন কর্মস্থলে এখনো যোগ দেননি বলে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে। তবে সাবিনা ইয়াসমিন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন বলে জানিয়েছে নওগাঁ জেলা পুলিশ। তাদের গত বছরের ৫ অক্টোবর থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ হিসেবে গণ্য করার কথা উল্লেখ ছিল বদলির প্রজ্ঞাপনে। এদিকে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বরের প্রজ্ঞাপনে ১২ জনকে বদলি করা হয়। এদের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু আশরাফ সিদ্দিকীকে রংপুরের বি সার্কেলে বদলি করা হয়। রংপুর জেলা পুলিশ জানিয়েছে, তিনি বি সার্কেলে এখনো যোগ দেননি। সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদ এ প্রতিবেদককে বলেন, বদলি দুই ধরনের হয়। সন্তুষ্টির আর অসন্তুষ্টির। তবে বদলি নির্দিষ্ট সময় পর হবে এটা রুটিন ওয়ার্ক। এরপরও অনেকে বদলি হওয়া জায়গায় না যাওয়ার জন্য নানা ধরনের তদবির করেন। আর বদলির পরও নতুন কর্মস্থলে না যাওয়া অবশ্যই শৃঙ্খলার ব্যত্যয়। এসব ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে শক্ত অবস্থান নেওয়া দরকার।

সর্বশেষ খবর