শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

৩২ জেলায় ছড়িয়েছে নিপাহ ভাইরাস

নাটোরে স্কুলছাত্রের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক ও নাটোর প্রতিনিধি

দেশের ৩২ জেলায় নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে মহাখালীর ডিএনসিসি কভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ ও ১০ আইসোলেশন শয্যা প্রস্তুত রাখতে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শেখ দাউদ আদনান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া হয়েছে এই নির্দেশনা। এতে বলা হয়, ‘বর্তমানে দেশের ২৮ জেলায় নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। এ জন্য মহাখালীর ডিএনসিসি কভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে ১০ বেডের আইসোলেশন ওয়ার্ড এবং ১০ বেডের আইসিইউ প্রস্তুত রাখতে বলা হলো।’ এমন পরিস্থিতিতে দেশের প্রতিটি হাসপাতালে জ্বরের উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের সেবা দেওয়ার সময় চিকিৎসকদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

নির্দেশনার মধ্যে আছে-রোগী দেখার সময় আবশ্যিকভাবে মাস্ক পরতে হবে। সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। জ্বরের উপসর্গ দেখা গেলে রোগীকে আবশ্যিকভাবে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখতে হবে। জ্বরের সঙ্গে অজ্ঞান অবস্থা দেখা দিলে রোগীকে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের আইসিইউতে রাখতে হবে। আইসিইউতে থাকাকালে রোগীর পরিচর্যাকারীর শুধু গ্লাভস, মাস্ক পরলেই হবে। কেননা নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী থেকে বাতাসের মাধ্যমে ওই ভাইরাস ছড়ায় না। যেহেতু আইসিইউতে রেখে এই রোগীর চিকিৎসা করা যায়, সে জন্য রেফার করার প্রয়োজন নেই। যে কোনো তথ্যের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের কল সেন্টারে ১৬২৬৩/৩৩৩ যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। সম্প্রতি সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছিলেন, চলতি মৌসুমে আটজন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এই ভাইরাসে মৃত্যুর হার শতকরা ৭০ শতাংশ।

নাটোরের বাগাতিপাড়ায় নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সিয়াম (১৩) নামের এক স্কুলছাত্র মারা গেছে। নিপাহ ভাইরাসে তার আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায় এলাকায় তথ্য সংগ্রহ করেছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।

নাটোরের সিভিল সার্জন ডা. রোজি আরা খাতুন বলেন, সিয়ামের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেখানে তার নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। পরে গত বৃহস্পতিবার ছয় সদস্যের আইইডিসিআরের দল ও স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাসহ মোট ১১ জন বাগাতিপাড়ার করমদোশীসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম সরেজমিন পরিদর্শন করেন। তিন দিন আইইডিসিআরের সদস্যরা ওই এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করবেন।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ জানুয়ারি নানার বাড়িতে গিয়ে কাঁচা খেজুরের রস খেয়েছিল সিয়াম। এরপর থেকে সে মাথাব্যথা ও জ্বরে আক্রান্ত হয়। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করানো হলেও সে সুস্থ হয়নি। পরে গত ২৯ জানুয়ারি জ্বরের পাশাপাশি কাশি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। ওই দিন রাতে পুঠিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩০ জানুয়ারি সিয়াম মারা যায়।

 

সর্বশেষ খবর