দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে নামতে শুরু করেছেন মানিকগঞ্জের বিভিন্ন আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। যারা এলাকায় ছিলেন না, তারাও নানা কৌশলে প্রার্থী হওয়ার জানান দিচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মানিকগঞ্জ জেলার তিনটি আসনেই বড় দুই দলের একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে নেমেছেন। দীর্ঘ সময় যাদের দেখা মেলেনি তারাও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী এলাকায় যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে ভোটারের চেয়ে কেন্দ্রে বেশি দৌড়ঝাঁপ করছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।
সাতটি উপজেলা, দুটি পৌরসভা ও ৬৫টি ইউনিয়ন নিয়ে মানিকগঞ্জ জেলা গঠিত। এখানে তিনটি নির্বাচনী আসন রয়েছে। বর্তমানে সবগুলো আসনই আওয়ামী লীগের দখলে। এসব আসন ধরে রাখতে মরিয়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি হারিয়ে যাওয়া আসন পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দখলে ছিল মানিকগঞ্জ। স্বাধীনতার-পরবর্তী সময়ে মানিকগঞ্জের সব আসন নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। তারপর বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দখলে জেলার আসনগুলো চলে যায়। পর্যায়ক্রমে হাতবদল হয়ে মানিকগঞ্জের তিনটি আসনই বর্তমানে আওয়ামী লীগের দখলে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠে ও কেন্দ্রে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দলের সংসদীয় বোর্ড যাকে মনোনয়ন দেবে আমরা তার পক্ষেই কাজ করব।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা সভাপতি আফরোজা খান রিতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি এখন আগের চেয়েও উজ্জীবিত এবং ঐক্যবদ্ধ। বিএনপির ঘাঁটি মানিকগঞ্জ পুনরুদ্ধারের জন্য নেতা-কর্মীরা এক হয়ে মাঠে নেমেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করেই বিএনপি নির্বাচনে যাবে এবং মানিকগঞ্জের তিনটি আসনে জয়লাভ করবে। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা সভাপতি এস এম আবদুল মান্নান বলেন, সঠিক নির্বাচন হলে এবার জাতীয় পার্টিই সরকার গঠন করবে। মানিকগঞ্জ জাতীয় পার্টির ঘাঁটি। ৩০০ আসনেই জাতীয় পার্টি প্রার্থী দেবে।মানিকগঞ্জ-১ (ঘিওর, শিবালয় ও দৌলতপুর) : এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান দুর্জয়। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে কাজ করছেন দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম। এ ছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারুল হক, শিবালয় উপজেলা সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউর রহমার খান জানু, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম জাহিদ দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা যায়।
এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এস এ জিন্নাহ কবীর আন্দোলন-সংগ্রামে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি এ আসনের প্রার্থীদের মধ্যে অন্যতম। এ ছাড়া এ আসনে বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের বড় ছেলে জেলা বিএনপির সহসভাপতি খোন্দকার আকবর হোসেন বাবলু মনোনয়ন প্রত্যাশায় কাজ করছেন।
মানিকগঞ্জ-২ (সিংগাইর, হরিরামপুর ও মানিকগঞ্জ সদরের তিনটি ইউনিয়ন) : এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের মমতাজ বেগম। আবারও তিনি এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া দলীয় মনোনয়ন পেতে কাজ করে যাচ্ছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক সালাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান সফিউল আরেফিন টুটুল, বিশিষ্ট শিল্পপতি দেওয়ান জাহিদ আহম্মেদ টুলু, সিংগাইর উপজেলা চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমান খান হান্নান, হরিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান সাঈদুর রহমান। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন বিএনপির প্রয়াত সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী সামসুল ইসলাম খান নয়া মিয়ার ছেলে সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার মঈনুল ইসলাম খান শান্ত। এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচন করবেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ সাবেক সংসদ সদস্য এবং মানিকগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এস এম আবদুল মান্নান।
মানিকগঞ্জ-৩ (সদর ও সাটুরিয়া) : জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন এটি। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাহিদ মালেক স্বপন। তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। আবারও তিনিই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে পারেন বলে জানা গেছে। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে কাজ করে যাচ্ছেন প্রয়াত সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী হারুনর রশীদ খান মুন্নুর মেয়ে দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও জেলা সভাপতি আফরোজা খান রিতা। এ ছাড়া সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি আতাউর রহমান এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা যায়। এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর একক প্রার্থী হচ্ছেন দলীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য জহিরুল আলম রুবেল।