মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মী পাঠানোর গতি ও গ্রহণযোগ্যতা দুই-ই বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সন্তুষ্ট দুই দেশই। কিন্তু অভিবাসন ব্যয় নিয়ে পর্যালোচনার জন্য দুই দেশের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই দেশ। ভবিষ্যতে এই কমিটি দুই দেশের কর্মী প্রেরণের সমঝোতা স্মারক পর্যালোচনা করে অভিবাসন ব্যয় ও কর্মীদের স্বার্থরক্ষায় আর কিছু করা যায় কি না তা দেখবে। এদিকে অতিজরুরি হিসেবে বিমানের টিকিট সংকটের কারণে লক্ষাধিক কর্মীর মালয়েশিয়া যাওয়া আটকে আছে। তাই বাড়তি ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা যায় কি না তাও ভেবে দেখা হচ্ছে। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরে দুই দেশের বৈঠকের পর এসব মনোভাবের কথা জানা গেছে।
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সফরসঙ্গীদের একটি সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ার আনোয়ার বিন ইব্রাহীমের নেতৃত্বে গঠিত নতুন সরকার বিদেশি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রচলিত এফডব্লিউসিএমএস সিস্টেমটি বহাল রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সেই সঙ্গে সামগ্রিক নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করার নীতিও গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া সোর্স কান্ট্রিগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়ায় আরও গতি আনতে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উচ্চপর্যায়ে প্রতিনিধি দল নিয়ে সফর করেছেন। সফরের আলোচনায় অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটি সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য উন্মুক্ত করার অনুরোধ জানান। জবাবে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকই অনুসরণ করবে। তবে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ওই সমঝোতা স্মারকের পুনর্মূল্যায়ন প্রয়োজন আছে কি না সে বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখবে। আলোচনা শেষে বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়ায় যাওয়ার ক্ষেত্রে দুই দেশই সব ধরনের সহযোগিতার বিষয়ে একমত হয়।
জানা যায়, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সমঝোতা স্মারক নবায়নের পর পরই ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনলাইনভিত্তিক ফরেন ওয়ার্কার্স সেন্ট্রালাইজড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (এফডব্লিউসিএমএস) মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের বিষয়টি সমন্বয় ও সহজ করতে ঢাকায় মালয়েশিয়া এমপ্লয়মেন্ট ফ্যাসিলিটেশন সেন্টার (এমইএফসি) স্থাপনের নির্দেশ দেয়। মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক নির্ধারিত এফডব্লিউসিএমএস-এর সঙ্গে এমইএফসির সরাসরি সংযোগ দেওয়া হয়। সব ধরনের তথ্য, কলিং ভিসা, ই-ভিসা প্রভৃতির যথার্থতা নির্ধারণ এবং জাল জালিয়াতি বন্ধের জন্য এটিই মালয়েশিয়া সরকারের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান। এমইএফসি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা প্রদান করে এবং মালয়েশিয়া সরকার ও এজেন্সিগুলোর মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করে।মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমান এমইএফসির মাধ্যমে এ পর্যন্ত পাওয়া ১ লাখ ই-ভিসার মধ্যে ইতোমধ্যেই ৭০ হাজার কর্মী মালয়েশিয়ায় গিয়েছে। অবশিষ্ট ৩০ হাজার কর্মীর মধ্যে অনেকে ইতোমধ্যে টিকিট ক্রয়/বুক করেছেন। এদের মধ্যে বেশ কিছু কর্মী টিকিটের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন এবং টিকিট না পেলে সময় মতো তারা মালয়েশিয়ায় যেতে পারবেন না। অথচ বায়রার একটি অংশ তাদের নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে এফইএফসির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে অপরাজনীতি শুরু করেছে। এতে দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জনশক্তি রপ্তানিকারকরা জানান, বর্তমানে এমইএফসি গড়ে সপ্তাহে ৭ হাজারের বেশি ই-ভিসা সরবরাহ করছে এবং এমইএফসি ভিসা সরবরাহের সক্ষমতা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে। এই গতিতে কর্মী ভিসা পাওয়া গেলে এ বছরের শেষ নাগাদ মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক ইতোমধ্যেই অনুমোদনপ্রাপ্ত চাহিদাপত্রের ২ লাখ ৪০ হাজার কর্মীসহ নতুনভাবে অনুমোদন পাওয়া কর্মীরাও মালয়েশিয়ায় যেতে পারবেন। কিন্তু কর্মী ভিসা এবং বিএমইটির চূড়ান্ত ছাড়পত্র পাওয়া কর্মীদের জন্য এরই মধ্যে টিকিট পাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। আগামী মার্চ পর্যন্ত সব ফ্লাইট বুক্ড হয়ে গেছে। পার্শবর্তী দেশ হয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার ফ্লাইটের টিকিটও ইতোমধ্যে দুরূহ হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় বর্তমানে যে হারে কর্মী যাচ্ছে তা ধরে রাখা এবং নতুনভাবে ভিসা ও ছাড়পত্রপ্রাপ্ত কর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় ফ্লাইটের ব্যবস্থা করে অধিক টিকিটের সংস্থান অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকরা। তাদের দাবি, লক্ষাধিক কর্মীর জন্য ই-ভিসা পাওয়া গেলেও বিমান টিকিটের অপ্রতুলতার কারণে ৭০ হাজার কর্মী মালয়েশিয়ায় গিয়েছে। এমতাবস্থায়, ই-ভিসা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টিকিট সংগ্রহ করে দ্রুততার সঙ্গে কর্মীকে মালয়েশিয়ায় ফ্লাইট দেওয়া প্রয়োজন।
জানা যায়, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর সমঝোতা স্মারক নবায়ন বা স্বাক্ষর হয়। এরপর বাংলাদেশে মেডিকেল সেন্টার নির্বাচন, বাংলাদেশ হাইকমিশন, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও বিএমইটিতে এফডব্লিউসিএমএস সিস্টেম স্থাপন বা সিনক্রোনাইজ এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর ২০২২ সালের ৮ আগস্ট থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া শুরু হয়। প্রথম দিকে হাইকমিশনের সত্যায়ন, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন, কর্মী নির্বাচন এবং বিএমইটির চূড়ান্ত ছাড়পত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সময় লেগে যায়। আগস্টের পর থেকে কর্মী যাওয়া দ্রুত হারে বেড়েছে।