বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

টিউলিপ চাষে নারী উদ্যোক্তারা

সরকার হায়দার, পঞ্চগড়

টিউলিপ চাষে নারী উদ্যোক্তারা

দেশের উত্তর প্রান্তের শীতপ্রধান উপজেলা তেঁতুলিয়ায় এবারও মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে বিদেশি ফুল টিউলিপ। গত বছর পরীক্ষামূলক চাষের পর এবার বাণিজ্যিক আকারে চাষ করছেন উপজেলার দর্জিপাড়া গ্রামের ২০ জন নারী উদ্যোক্তা। অপরূপ সৌন্দর্যের এই ফুল দেখতে প্রতিদিন হাজারো পর্যটক ছুটে আসছেন। ফুলের বাহার, পর্যটকদের পদচারণে আর টিউলিপের বাণিজ্য পর্যটন ক্ষেত্রে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে তেঁতুলিয়ায়। পর্যটকরা বলছেন, টিউলিপ দেখে তারা মুগ্ধ। ১০ রঙের ১০ প্রজাতির হাজার হাজার ফুল দেখে পর্যটকরা অবাক। তাদের চোখে বিস্ময়।

নেদারল্যান্ডস, কাশ্মীর বা তুরস্ক নয়, ঠাণ্ডার দেশের ফুল টিউলিপ মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিচ্ছে আমাদের নিজের দেশেই। ফুলের মিষ্টি অনুভূতি হৃদয়ে মাখার জন্য তাই ছুটে আসছেন তারা। পর্যটকরা বলছেন, হিমালয়ান সমতল অঞ্চল তেঁতুলিয়ায় এমনিতে সারা বছর পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। এবার টিউলিপ আরও নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এ বছর ১০ প্রজাতির টিউলিপ ১০ রঙে রাঙিয়েছে দর্জিপাড়া গ্রাম। জনপ্রতি ৫০ টাকার টিকিট কেটে এবং শিশুরা বিনা টিকিটে ঢুকছেন টিউলিপ বাগানে। টিউলিপের প্রজাতি ও রংগুলো হচ্ছে- অ্যান্টার্কটিকা (সাদা), ডেনমার্ক (কমলা ছায়া), লালিবেলা (লাল), ডাচ সূর্যোদয় (হলুদ), স্ট্রং গোল্ড (হলুদ), জান্টুপিঙ্ক (গোলাপি), হোয়াইট মার্ভেল (সাদা), মিস্টিক ভ্যান ইজক (গোলাপি), হ্যাপি জেনারেশন (সাদা লাল শেড) ও গোল্ডেন টিকিট (হলুদ)।

তেঁতুলিয়া শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরেই সবজি গ্রাম বলে খ্যাত দর্জিপাড়া গ্রাম। গত বছর এই গ্রামে ২০ শতক জমিতে স্থানীয় নারী কিষানিদের সংগঠিত করে পরীক্ষামূলকভাবে টিউলিপ চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন ‘ইএসডিও’। ফুল চাষে অর্থায়ন করছে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফ। প্রথমবার পরীক্ষামূলক চাষে সফল হওয়ার পর এবার ব্যাপক আকারে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে টিউলিপ। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এবং ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট (ইফাদ)-এর সহযোগিতায় দেশের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) এর উদ্যোগে এবার ২০ জন নারী কিষানি প্রায় দুই একর জমিতে টিউলিপ চাষ করেন। গত ১০ জানুয়ারি টিউলিপের বীজ রোপণ করা হয়। রোপণের ১৮ দিনের মাথায় টিউলিপ রং ছড়িয়ে ফুটতে থাকে। নারী উদ্যোক্তারা বলছেন, গত বছর টিউলিপ চাষ করে তারা ভালো লাভবান হয়েছেন। এবারও তাদের ফুল দেখতে হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসছেন। তারা ফুল কিনছেন এবং ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় টিউলিপ রপ্তানি করছেন। উদ্যোক্তা মোর্শেদা বেগম জানান, গত বছর ৫ শতক জমিতে টিউলিপ চাষ করে সফল হয়েছি। এবার তাই ২০ জন মিলে ১ একর জমিতে ৮৫ হাজার টিউলিপের চারা রোপণ করি। ১৫ হাজার বীজ রোপণ করি টবে। টিউলিপ চাষ অন্যান্য ফসলের থেকে লাভজনক। মাত্র ১৮ থেকে ২০ দিনের মধ্যে টিউলিপ চাষ করা যায়। তাই সহযোগিতা পেলে প্রতি বছর টিউলিপ চাষ করব। টিউলিপ এবং পর্যটনকে মাথায় রেখে ভবিষ্যতে আরও নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানাল ইএসডিও কর্তৃপক্ষ। ইএসডিওর পরিচালক (প্রশাসন) ড. সেলিমা আখতার জানান, দর্জিপাড়া গ্রামকে ফুলের পর্যটন হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে চাই। এ জন্য নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। শুধু টিউলিপ নয়, আরও নানা প্রজাতির ফুল চাষে নারী উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা দেওয়া হবে।

তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, শীতপ্রধান এলাকা হওয়ায় তেঁতুলিয়ায় টিউলিপ চাষ করা সম্ভব। বাণিজ্যিক আকারে এখানকার নারী উদ্যেক্তারা সফল হয়েছে। লাভজনক যে কোনো কৃষিতে সরকার সহযোগিতা দিচ্ছে। সরকারের এই পরিকল্পনাকে সফল করতে আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে সব সহযোগিতা করছি।

 

 

সর্বশেষ খবর