শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিরক্তিকর কল এড়াতে চালু হচ্ছে অটোকলার

♦ থাকছে জেল জরিমানাসহ মোবাইল কোর্টের ব্যবস্থা ♦ লক্ষ্য ভুক্তভোগীদের দ্রুত সেবা দেওয়া

আলী আজম

বিরক্তিকর কল এড়াতে চালু হচ্ছে অটোকলার

বিরক্তিকর কল এড়াতে জাতীয় জরুরি সেবা ট্রিপল নাইনে (৯৯৯) যুক্ত হচ্ছে অটোকলার। গ্রাহক ট্রিপল নাইনে ফোন করলেই তার লোকেশন ও পরিচিতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসবে। ট্রিপল নাইন কর্তৃপক্ষ কেবলমাত্র গ্রাহকের সমস্যা শুনবে এবং দ্রুত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করবে। ট্রিপল নাইনে অটোকলার যুক্ত হওয়ায় বিরক্তিকর কল কমে যাবে। কেউ বিরক্তিকর কল দিলেই তার বিরুদ্ধে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে বিরক্তিকর কলারের ছয় মাসের জেল বা ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা, এমনকি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমেও বিচার করা হতে পারে। অটোকলারের একটাই লক্ষ্য, ভুক্তভোগী গ্রাহকদের দ্রুত সেবা দেওয়া।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে চালুর পর থেকে জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে ইতোমধ্যে আস্থা অর্জন করেছে ট্রিপল নাইন সেবাটি। গত পাঁচ বছর দুই মাসে সরাসরি সমাধানযোগ্য কলের মধ্যে পুলিশ সার্ভিস দেওয়া হয়েছে ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৩৫টি; ফায়ার সার্ভিস ১ লাখ ২৭ হাজার ১৭১টি এবং অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ১ লাখ ১২ হাজার ৫৭৬টি। ফলে সহায়তার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে ট্রিপল নাইন। জরুরি অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশি সেবা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। আস্থা বাড়ছে এই জরুরি সেবার ওপর। ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ গতিতে কাজ করছে এ সেবাটি।

২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর সেবাটি চালুর পর থেকে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৪ কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৬১টি কল এসেছে। এর মধ্যে ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮২টি কল সরাসরি সমাধানযোগ্য ছিল। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, মোট কলের ১ কোটি ৮০ লাখ ৬৬ হাজার ৬২২টির বিপরীতে কোনো না কোনোভাবে সার্ভিস দেওয়া হয়েছে। যা মোট কলের ৪১.২০ শতাংশ। পাশাপাশি ট্রিপল নাইনে অপ্রয়োজনে অনেকে ফোন করছেন। দিচ্ছেন মিথ্যা তথ্যও। গত পাঁচ বছরেরও বেশি সময়ে ট্রিপল নাইনে ২ কোটি ৫৭ লাখ ৮৮ হাজার ৯৩৯টি অপ্রয়োজনীয় কল এসেছে। যা মোট কলের ৫৮.৮০ শতাংশ। এর মধ্যে বিরক্তিকর কলই ছিল ২৩ লাখ ১১ হাজার ৯৬৫টি। জানা গেছে, ২০২১ সালের ১ জুলাই বিরক্ত করার কলের জন্য দণ্ডের বিধান রেখে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০১ এর ধারা ৭০ (১) সংশোধন করা হয়। এই আইনে ‘যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া কল দিলে ১ লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড হতে পারে। এমনকি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমেও বিরক্তিকর কলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। বিরক্তিকর কল কমে গেলে একদিকে যেমন সময় বাঁচবে অন্যদিকে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের দ্রুত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। অনেকে ছিনতাই, দুর্ঘটনা, আগুনসহ বিভিন্ন বিপদে পড়ে ট্রিপল নাইনে ফোন দেন। তিনি ফোন দিয়ে বিস্তারিত বলতে পারেন না বা ঘটনার শিকার হওয়ার কারণে নির্বাক হয়ে যান।

সত্যিকারের বিপদগ্রস্তদের দ্রুত সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে অটোকলার চালু করা হচ্ছে। এতে অপ্রয়োজনীয়, মিথ্যা তথ্য বা বিরক্তিকর কল কমে যাবে। ট্রিপল নাইন চালুর পর থেকে অপ্রয়োজনীয় কলের সংখ্যা বেশি ছিল। এখন তা অনেক কমে আসছে। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ট্রিপল নাইনের কর্মী বাহিনী দিনরাত ২৪ ঘণ্টা জনগণকে নির্বিঘ্নে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। দেশের সব মেট্রোপলিটন এলাকায় এমডিটি (মোবাইল ডাটা টার্মিনাল) ও টিডিএস (থানা ডেসপাস সিস্টেম) চালু করার ফলে সেবাটি আরও সহজ হয়েছে। ট্রিপল নাইন সেবাটি গ্রহণ করে জনগণ খুশি।

৯৯৯ সেবা বর্তমানে একসঙ্গে ৮০টি কল রিসিভ করতে পারে। প্রতিদিন গড়ে ২২ হাজার কল আসছে। এর মধ্যে সার্ভিসযোগ্য কল আসছে ৪১ শতাংশ। ট্রিপল নাইনে একজন অতিরিক্ত ডিআইজির নেতৃত্বে ৪৩০ জন কর্মকর্তা জনগণের সেবায় কাজ করছেন। অপ্রয়োজনীয় কল এড়াতে জনগণকে আরও সচেতন হতে হবে। ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের সঙ্গে সমন্বয় করে ট্রিপল নাইনকে অটোমেশন করা হচ্ছে। এটি চালু হলে সময় কমে যাবে, দ্রুত সার্ভিস দেওয়া যাবে। রেন্সপন্স টাইম যত কম লাগবে, ততই দ্রুত জনগণকে সেবা দেওয়া যাবে। ট্রিপল নাইনের মূল লক্ষ্য জনগণকে অল্প সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রিপল নাইনের বিষয়ে প্রচারণার অভাব রয়েছে। এই কার্যক্রমের ব্যাপকতা আরও বৃদ্ধি করা উচিত। তবে তথ্যদাতা যেই হোক না কেন তাকে বেশি বিরক্ত করা যাবে না। তার কাছ থেকে একবারই তথ্য নিতে হবে। নইলে পরবর্তীতে তিনি তথ্য দিতে বিমুখ হবেন। অন্যরাও আগ্রহ হারাবেন। শুধু পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস কিংবা অ্যাম্বুলেন্সই নয় এর সঙ্গে বিদ্যুৎ, গ্যাস, ওয়াসাসহ মাঠ পর্যায়ে কর্মরত বিভিন্ন সামাজিক ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাকে সম্পৃক্ত করতে হবে। এ সেবাটি ব্যাপকভাবে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারলে তারা বেশি উপকৃত হবেন। জাতীয় জরুরি সেবা ট্রিপল নাইনের (৯৯৯) প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ জানান, ট্রিপল নাইনে মানুষের আস্থা বাড়ছে। বাড়ছে সেবার মানও। ট্রিপল নাইনে কল করার সঙ্গে সঙ্গে মিলছে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা। কল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দ্রুত সেবাটি নিশ্চিত করতে চেষ্টা করি। গত পাঁচ বছর দুই মাসে জনগণকে সরাসরি সমাধানযোগ্য ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮২টি কলের বিপরীতে ৭৮.৯৩ শতাংশ পুলিশি সেবা, ১১.১৮ শতাংশ ফায়ার সার্ভিস সেবা এবং ৯.৮৯ শতাংশ অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেওয়া হয়েছে।

ট্রিপল নাইনের প্রতি জনগণের আস্থা বেড়েই চলছে। জনগণ যখনই বিপদে পড়ে তখনই ট্রিপল নাইনে ফোন দিচ্ছে। আমাদের দক্ষ কর্মী বাহিনী নিরলস পরিশ্রম করে জনগণকে সেবাটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। তবে কিছু অনাকাক্সিক্ষত কল আমরা পাচ্ছি। এতে ভুক্তভোগীদের সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। এ জন্য অপ্রয়োজনীয়, মিথ্যা বা বিরক্তিকর কল এড়াতে অটোকলার সিস্টেম চালু করা হচ্ছে। এতে সত্যিকারের ভুক্তভোগীদের আরও দ্রুত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

সর্বশেষ খবর