রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

নকল হিজড়া চক্রের জিম্মি বাণিজ্য, অভিযুক্ত ৬

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ পাবলিক কলেজের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্র ২৩ জানুয়ারি বিকালে ক্যাম্পাস থেকে বাসায় ফেরার পথে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় হিজড়ার কবলে পড়েন। পরে ওই হিজড়াসহ আরও কয়েকজন তাকে একটি মেসে নিয়ে যায়। সেখানে একজন পতিতার সঙ্গে ছবি তুলে তার কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করে। এ ঘটনায় ভুক্তোভোগীর পরিবার ঘটনাটি জানালে ওই হিজড়াসহ মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের ছয়জনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ডিবি বলছে, এই চক্রের প্রধান কাজল ওরফে সজনী হিজড়া। তার আসল নাম সোহাগ। তার দুই সন্তান রয়েছে। সজনী হিজড়া তার মতো আরও সাত থেকে আটজনকে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘নকল হিজড়া গ্রুপ’। এরা রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে টাকার জন্য নাজেহাল করতেন। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে চাঁদাবাজিসহ নানাভাবে ব্ল্যাকমেইল করে আসছিলেন। গতকাল তাদের আদালতে পাঠানো হলে দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ডিবির ওয়ারী বিভাগের এডিসি মো. তরিকুর রহমান বলেন, ২৩ জানুয়ারি বিকালে কলেজ থেকে ভুক্তভোগী সাইফুল বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার মোড়ে অজ্ঞাতনামা সাত-আটজন পুরুষ এবং তাদের সঙ্গে থাকা এক হিজড়া তার পথ রোধ করেন। পরে চেতনানাশক ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে তাকে অচেতন করেন। পরে তাকে কৌশলে একটি মেসের কক্ষে নিয়ে বন্দি করে রাখেন। কিছুক্ষণ পর হিজড়া লোকটি একজন পতিতাসহ সেই কক্ষে ঢুকে ভুক্তভোগীকে উলঙ্গ হতে বলেন। ভুক্তভোগী রাজি না হলে হিজড়ার সাঙ্গোপাঙ্গরা সেই কক্ষে ঢুকে ভুক্তভোগীকে বেধড়ক মারধর করেন এবং পতিতার সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তোলেন।

চক্রটি ভুক্তভোগীর ব্যাগে থাকা ১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা ও মানিব্যাগ কেড়ে নেন এবং আরও টাকা দাবি করেন। নইলে মোবাইল ফোনে তোলা আপত্তিকর ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এতে ভুক্তভোগী ভীত হয়ে তার আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে আরও নগদ ২৪ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে এনে দেন। পরবর্তীতে ওই ঘটনায় ভুক্তভোগীর ভাই যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন। ওই মামলার ছায়া তদন্ত করে আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করে ডিবি। তারা হলেন- সোহাগ মিয়া ওরফে স্বজন ওরফে কাজল ওরফে হিজড়া সজনী, নাছির, আমানুর মণ্ডল, রাজু, আবদুর রহমান ও হৃদয় মিয়া। এদের মধ্যে মূল পরিকল্পনাকারী সোহাগ। নকল হিজড়া সেজে দীর্ঘদিন ধরে এই চক্রের সদস্যরা কৌশলে অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এরা শুধু রাস্তায় বা বাসায় চাঁদাবাজি নয়, অপহরণের মাধ্যমেও চক্রটি মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। সেই টাকা চড়া সুদে খাটানোরও প্রমাণ পেয়েছে ডিবি।

সর্বশেষ খবর