ফুটবল বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন টিম আর্জেন্টিনাকে বাংলাদেশিদের সাপোর্ট করার ফল খুব দ্রুত মিলছে। দেশটির পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবিষয়ক মন্ত্রী সান্তিয়াগো ক্যাফিয়েরো ঢাকা সফরে এসে দূতাবাস খোলার ঘোষণা দেওয়ার পর এখন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে কো-অপারেশন অ্যান্ড ট্রেড এক্সচেঞ্জ শীর্ষক সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষর করতে যাচ্ছেন। সচিবালয়ে আজ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই এমওইউতে স্বাক্ষর করবেন।
সূত্র জানান, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ লক্ষ্য হলেও এ সমঝোতা চুক্তিতে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে। আর্জেন্টিনা বৃহত্তম খাদ্য উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটি। চুক্তির খসড়ায় দেশটি প্রস্তাব দিয়েছে, তারা বাংলাদেশকে খাদ্য নিরাপত্তায় সহায়তা করতে চায়। আর্জেন্টিনায় যে গম উৎপাদন হয়, তার একটি বড় অংশ তারা বাংলাদেশে রপ্তানি করতে চায়।
সূত্র জানান, ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী গম ও আটার সরবরাহ ব্যাপকভাবে কমে গেছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে এ পণ্যটির দাম বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। চুক্তির খসড়ায় আর্জেন্টিনা বলছে, বিশ্বব্যাপী গমের বিপুল চাহিদা থাকলেও তারা তাদের দেশে উৎপাদিত গম বাংলাদেশে যাতে সহজে রপ্তানি করতে পারে, সে লক্ষ্যেই এ সমঝোতা চুক্তির প্রস্তাব।
জানা গেছে, ২৫ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চুক্তির খসড়াটি আর্জেন্টিনা থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপনকান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে এ খসড়া নিয়ে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়। ওই সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোনো ধরনের সংশোধন ছাড়াই চুক্তিটি স্বাক্ষর হবে।
বৈঠকসূত্র জানান, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এ সমঝোতা চুক্তিটি স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেওয়া হলেও আর্জেন্টিনার খসড়ায় শুধু গম রপ্তানির বিষয়টি রয়েছে। সভায় উপস্থিত অংশীজন খসড়ায় বিভিন্ন সংশোধনের প্রস্তাব দিলেও যথেষ্ট সময় না থাকায় কোনো ধরনের সংশোধন ছাড়াই আর্জেন্টিনার পাঠানো খসড়াটির ওপর এমওইউ সই হচ্ছে। কারণ এখন সংশোধন নিয়ে আলোচনা করতে গেলে চুক্তিটি অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বাংলাদেশ। সূত্র জানান, এ সমঝোতা চুক্তিতে আর্জেন্টিনায় বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় পণ্য রপ্তানির বিষয়ে আলোচনা, দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক কমানো, দুই দেশের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের বিষয়ে প্রস্তাব উঠেছিল; তবে এ মুহূর্তে এসব সংশোধন না এনে পরে এসব ইস্যুতে আলোচনা করা হবে বলে জানানো হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, আর্জেন্টিনার সঙ্গে যেহেতু কোনো ধরনের বাণিজ্য চুক্তি নেই, তাই আমরা চাচ্ছি আগে যে কোনো পর্যায়ে একটি চুক্তি হোক। এ ছাড়া চুক্তির খসড়ায় পরে সংশোধন আনার জন্য ধারা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আমরা সেই ধারাতেই পরে এ চুক্তি সংশোধন এনে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিশেষ করে পণ্য রপ্তানির বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে পারব। লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর বাণিজ্য জোট মারকোসারের সদস্য হওয়ার কারণে আর্জেন্টিনায় পণ্য রপ্তানিতেও অনেক বেশি শুল্ক রয়েছে। তবে মারকোসারের সদস্য হলেও দেশটির সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করতে বাধা নেই। সে কারণে প্রাথমিকভাবে এ সমঝোতা চুক্তিটি স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ফুটবল কূটনীতির মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, সেই সুযোগটি বাংলাদেশ হাতছাড়া করতে চাইছে না বলে জানান ওই কর্মকর্তা। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবির হিসাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে আর্জেন্টিনায় ৬৮ লাখ ৫৪ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছরে তা বেড়ে ৯৫ লাখ ১৮ হাজার ডলারে দাঁড়ায়। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানি বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) তিন মাসে ৩৭ লাখ ৩০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫৯ শতাংশ বেশি। গত বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে আর্জেন্টিনায় বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল ১৪ লাখ ৩৭ হাজার ডলারের। দেশটিতে তৈরি পোশাক ছাড়াও জুতা, ম্যাট্রেস, শিশুদের খেলনাসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ।