শুক্রবার, ৩ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

তিস্তার বুকে কালো সোনা

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

তিস্তার বুকে কালো সোনা

তিস্তার চরে এবার কালো সোনা খ্যাত মিষ্টি কুমড়া চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন হাজারো কৃষক। বেশ কয়েকজন কৃষক হাসিমুখে বলেন, চরের এই মরুভূমিতে যখন ফসল ফলিয়ে ভালো দাম পাই তখন আর কষ্ট থাকে না। তবে সরকারি সহযোগিতা না পাওয়ার ক্ষোভও রয়েছে এসব কৃষকের। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলার দুই শতাধিক চরের ২৭০ হেক্টর জমিতে এবার মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে।

চাষি ছকমল মিয়া বলেন, বালুতে গাছের চারাগুলো বিচরণ করে। তাই কোনো মাচাং দিতে হয় না। এজন্য খরচ কম। উৎপাদনও ভালো হয়। কম খরচে অধিক লাভ করতে চরাঞ্চলের বালু জমিতে মিষ্টি কুমড়ার বিকল্প নেই। যদি আগাম বন্যা না আসে তবে ৪০/৫০ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রির আশা করছি। বন্যা আর ভাঙনের সম্পদহারা চরাঞ্চলের মানুষ জীবন জীবিকার তাগিদে জেগে ওঠা বালুচরেই ফসল বুনেন। ধু-ধু বালুতে ফসল ফলানো বেশ কষ্টসাধ্য। পেটে দুমুঠো ভাত জোগাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে বালুচরে ফসলের চাষাবাদ করেন নদীপাড়ের মানুষ। তবে চরাঞ্চলের জমিতে খিরা, তরমুজ, বাদাম চাষ হলেও মিষ্টি কুমড়ার কদর বেশি। চরাঞ্চলের বালুতে মিষ্টি কুমড়ার চাষাবাদে খরচ কম এবং ফলন বেশি হওয়ায় এই ফসলে বেশি আগ্রহ চাষিদের।

চাষিরা জানান, বালুচরে গর্ত করে বালু সরিয়ে সেই গর্তে অন্যস্থান থেকে আনা পলিমাটি দিয়ে গর্ত পূরণ করে দেওয়া হয়। প্রতিটি গর্তে জৈবসার দিয়ে মিশ্রণ করে ৩/৪টি করে মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করতে হয়। এরপর চারা গাছ বড় হলে পানি সেচ আর একটু পরিচর্যা করলে ফুল ফল আসতে শুরু করে। প্রতি গাছে প্রায় ৮/১০টি করে কুমড়া আসে। প্রতিটি ৩/৪ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। প্রতিটি কুমড়া খেতেই ৫০/৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়। কালিগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের চর রুদ্রেশ্বর গ্রামের কৃষক হাছেন আলী জানান, তার নিজের কোনো জমি নেই। তাই তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে ১ হাজার কুমড়ার চারা লাগিয়েছেন। তার খেতে ফল আসতে শুরু করেছে। ১০ হাজার টাকা খরচে এ খেত থেকে প্রায় ৪০ হাজার টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রির আশা করেন। চর গোবর্ধনের কৃষক হারুন মিয়া বলেন, নদীতে সব জমি ভেঙে গেছে। একটা লাউ গাছ লাগানোর মত জমি নেই। চরের বালুময় জমিতে গর্ত খুঁড়ে ৫০০ মিষ্টি কুমড়ার চারা লাগিয়েছি। দূর থেকে পাইপে পানি সেচ দিতে হয়। প্রতিটি গাছে ৭/৮টি করে কুমড়া এসেছে। আশা করছি তিন মাসের এ চাষাবাদে ২০ হাজার টাকা আসবে। লালমনিরহাট কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, চরের এসব কৃষককে যদি প্রণোদনার আওতায় আনা যায় তাহলে তারা আরও স্বাবলম্বী হবে। আমরা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। আশা করছি খুব শিগগিরই সরকার এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিবে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর