রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

এবার পাশের মার্কেটে আগুন

বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা হচ্ছে, মালপত্র নিয়ে রাস্তায় বসছেন ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

এবার পাশের মার্কেটে আগুন

রাজধানীর বঙ্গবাজারের পাশে মালেকা মার্কেটে এবার আগুন লেগেছে। গতকাল সকাল ৮টা ৫ মিনিটে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। ৪০ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। দেড় ঘণ্টা পর ৯টা ৪০ মিনিটে আগুন সম্পূর্ণ নেভানো হয়। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, মালেকা পাঁচতলা ভবনের চতুর্থ তলায় আগুনের সূত্রপাত হয়। ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। আগুনের সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানার চেষ্টা চলছে।

এদিকে আগুনে পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজারের দক্ষিণ পাশে ব্যক্তিগত উদ্যোগে মালপত্র নিয়ে বিক্রির জন্য গতকাল বসেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। মূল সড়কে অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী অস্থায়ী চৌকিতে মালপত্র পেতে রাখেন বিক্রির জন্য। তারা জানান, সকাল থেকে নিজ উদ্যোগে তারা মূল সড়কে বসেছেন। তবে ব্যবসায়ীদের জন্য অস্থায়ী দোকান বসানোর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ ছাড়া পুলিশের অস্থায়ী বুথে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাদের তালিকাও করা হয়।

মালেকা মার্কেটে পাঁচটি দোকান রয়েছে মো. টিটুর। তিনি বলেন, ‘সকালে এক ব্যক্তি এসে আমাকে বলেন, মার্কেটের ভিতর আগুন লেগেছে। পরে আমি আর ওই ব্যক্তি মার্কেটের চতুর্থ তলায় দৌড়ে উঠে গিয়ে দেখি, একটা কক্ষের ভিতর প্রচ- আগুন। ওই কক্ষে আর কিছু ছিল না। পরে ওই জায়গা থেকে দৌড়ে বের হয়ে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিই। পরিস্থিতি যা দেখেছি, তাতে ওইটা বিল্ডিং না হয়ে টিনশেড মার্কেট হলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ত। কিন্তু বিল্ডিং আর ফায়ার সার্ভিসের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ায় আগুন ছড়াতে পারেনি। ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, ছয়তলা ভবনটির চতুর্থ তলায় একটি গোডাউনে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।

গতকাল বঙ্গবাজারে সরেজমিন দেখা যায়, অগ্নিকান্ডের পর চার দিন পার হলেও এখনো ধোঁয়া উড়ছে কোথাও কোথাও। ভয়াবহ এ আগুনে বঙ্গবাজার এলাকার চারটি মার্কেট পুড়ে গেছে। তবে এনেক্সকো টাওয়ার পুরোপুরি না পুড়লেও অধিকাংশ দোকানের মালামাল পুড়ে গেছে। ওই সব দোকান থেকে কিছু মালামাল বের করা গেলেও বেশির ভাগই পুড়ে গেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর মার্কেটের ধ্বংসস্তূপ থেকে পুড়ে যাওয়া বা অক্ষত থাকা পোশাক কুড়িয়ে নেন অনেকেই। সেসব পোশাক রোদে শুকিয়ে বিক্রি করতে দেখা গেছে কাউকে কাউকে। গুলিস্তান ফ্লাইওভারের নিচে কয়েকটা স্থানে কেউ কেউ বিক্রি করছেন এসব পোশাক।

এদিকে ধ্বংসস্তূপ থেকে আবর্জনা সরাতে আরও সময় লাগবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে দ্রুত তা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহযোগিতা দিতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। গতকাল বঙ্গবাজারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওই অ্যাকাউন্টে সহায়তা পাঠাতে অনুরোধ জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, বঙ্গবাজারে অস্থায়ীভাবে দোকান বসানো সম্ভব হচ্ছে না। আবর্জনা ও ধ্বংসস্তূপ অপসারণ শেষ হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অস্থায়ীভাবে দোকান বসানোর কাজ শুরু হবে। তবে বঙ্গবাজারের দক্ষিণ পাশে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কয়েকজন ব্যবসায়ী অস্থায়ী দোকান নিয়ে বসেছেন। এখানে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। কয়েক হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও কর্মচারী নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছেন। বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা আগামীকাল (রবিবার) মেয়রের কাছে দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, দেশ-বিদেশ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করতে চেয়েছেন অনেকেই। যারা সহযোগিতা করতে চান, তারা যেন সেটি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে করেন। এ জন্য আইএফআইসি ব্যাংকে একটি হিসাব খোলা হয়েছে। এই অর্থ প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপসের কাছে দেওয়া হবে। তারা সেটি ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিতরণ করবেন। বঙ্গবাজার অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত সহায়তা তহবিল, সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর ০২০০০৯৪০৬৬০৩১। মিলন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, বঙ্গবাজারে তার তিনটি দোকান পুড়ে গেছে। ওই দোকানে তার বিনিয়োগ ছিল ৯৬ লাখ টাকা। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ঈদের মৌসুমে মূল বেচাকেনা হয়। দোকান পুড়ে সহায়সম্বল সব হারিয়েছেন। এখন ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মালামাল বাকিতে এনে চৌকি পেতে এখানে বসেছেন। তিনি বলেন, ‘সামনে ঈদ। সব শেষ হয়ে গেছে। বাধ্য হয়েই রাস্তায় এসে বসেছি। কারও অনুমতি নিইনি।’ বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জানান, বঙ্গবাজারের পুড়ে যাওয়া মালামাল, বিশেষ করে টিন ও লোহাগুলো প্রায় ৪০ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। ওই টাকাও নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যাবে। গতকাল সকালে অগ্নিকা-কবলিত বঙ্গবাজারের পাশে অস্থায়ী বুথ খোলে পুলিশ। সেখানে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা শুরু করেন। তবে অনলাইন সার্ভার জটিলতার কারণে জিডি করার প্রক্রিয়ায় দেরি হয়। ওই বুথে গিয়ে জানা যায়, জিডিতে সেখানে ক্ষয়ক্ষতির আনুমানিক হিসাব তুলে ধরেন ক্ষতিগ্রস্তরা। আর ব্যবসায়ী নেতারাও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করেন সেখানে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার জন্য এই তালিকা দেওয়া হবে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে। বুথে কর্তব্যরত শাহবাগ থানার এসআই সুমন বলেন, ‘সার্ভার স্লো। সে কারণে জিডি নিতে দেরি হচ্ছে।’ এর আগে মঙ্গলবার ভোর ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। বেলা ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে প্রায় ৫ হাজার দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, আগুনে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আগুনের ধোঁয়ায় ও অন্যান্য ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের আটজনসহ মোট ১২ জন আহত হন। ওই আগুনের রেশ কাটতে না কাটতে আবারও বঙ্গবাজারের পাশে মালেকা মার্কেটে আগুন লাগল। বঙ্গবাজারের আশপাশের সব ভবন ও মার্কেট আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে বলেও জানায় ফায়ার সার্ভিস।

সর্বশেষ খবর