মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাখাইনদের জলকেলি

কক্সবাজার প্রতিনিধি

রাখাইনদের জলকেলি

রাখাইন সম্প্রদায়ের বর্ষপঞ্জিকা মতে, গত ১৬ এপ্রিল রাতে শেষ হয়েছে ১৩৮৪ মগীসন। গতকাল ১৭ এপ্রিল শুরু হয়েছে রাখাইন নতুন বর্ষ ১৩৮৫ মগীসন। আর এ মগীসনকে বিদায় ও বরণকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায়ের তিন দিনব্যাপী সাংগ্রাইং পোয়ে বা ঐতিহ্যবাহী জলকেলি উৎসব শুরু হয়েছে।

গতকাল দুপুরে কক্সবাজার শহরের বৌদ্ধ মন্দির সংলগ্ন প্যান্ডেলে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে। অনুষ্ঠানে রাখাইন ব্যান্ড দলের পরিবেশনায় গান ছাড়াও ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশন করা হয়েছে।

রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ বলছেন, পুরাতন বছরের সব গ্লানি-দুঃখ জলে মুছে নতুনভাবে জলে জলে পরিশুদ্ধির জন্য এ উৎসব। টানা তিন দিন চলবে এ উৎসব।

কক্সবাজার শহরের রাখাইন পল্লীতে দেখা গেছে, ঢোল-বাজনা, গানে তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ শোভযাত্রাসহকারে যাচ্ছে প্যান্ডেলে-প্যান্ডেলে। যেখানে আগে থেকে বসে আছে সারিবদ্ধ তরুণী। শোভাযাত্রা নিয়ে যাওয়া তরুণরা প্যান্ডেলের সামনে গিয়ে কোনো একজনকে আগে পানি নিক্ষেপ করে আমন্ত্রণ জানান। ওই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে   তরুণী তরুণকে লক্ষ্য করে পানি নিক্ষেপ করেন। এরপর উভয় পক্ষের মধ্যে চলে পানি নিক্ষেপের খেলা। রাখাইন তরুণ লা চিং অ্যাং জানান, নতুন বর্ষকে বিদায় ও বরণের এটি ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব। এ উৎসব ঘিরে তিন দিনব্যাপী জলকেলি ছাড়াও বাড়িতে বাড়িতে রান্না করা হয় নিজস্ব খাবার। এটিকে প্রাণের উচ্ছ্বাসে মাতিয়ে তোলার উৎসব বলে মন্তব্য করে প্রিয়াংকা রাখাইন জানান, একে অপরের সঙ্গে জল নিক্ষেপ ছাড়াও নিজের মধ্যে সামাজিক বন্ধন ও ঐক্য তৈরিতে এ উৎসব ভূমিকা রাখে।

এ উৎসবের সার্বিক সহযোগিতা প্রদানকারী কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক মংছেন লা জানান, এবার কক্সবাজার শহরের রাখাইন পল্লীতে ১৫টি প্যান্ডেল তৈরি হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তার মধ্যে তিন দিন উৎসব চলবে। এখানে কেবল রাখাইন নয়, অন্যান্য ধর্মের মানুষও আসছেন। যার কারণে সম্প্রীতির একটি বন্ধনও তৈরি হয়। একই সঙ্গে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী, ঈদগাঁও, টেকনাফ, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া, উখিয়ার রাখাইন পল্লী ঘিরে শতাধিক প্যান্ডেলে তিন দিনব্যাপী এ উৎসব চলছে।

রাখাইনদের তিন দিনব্যাপী জলকেলি উৎসব সার্বিকভাবে সফল ও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করতে সকল প্রকার কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম। তিনি জানান, জলকেলি উৎসবটি রাখাইনদের হলেও এটি কালক্রমে এ অঞ্চলের মানুষের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে। এর জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে রয়েছেন। একই সঙ্গে গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। আশা করছি শান্তিপূর্ণভাবে এ উৎসব শেষ করা সম্ভব হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর