চট্টগ্রামে বড় অপরাধের সঙ্গে এখন সম্পৃক্ত ছোটরাও। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে নগরীর ২৫ স্পটে সক্রিয় রয়েছে অর্ধশতাধিক শিশু, যাদের বয়স ১২ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। এরা ছিনতাই, মাদক বহন ও মোবাইল টানা পার্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
অভিযোগ রয়েছে, শিশুদের নেপথ্যে কাজ করছে সক্রিয় দাগি অপরাধী চক্র ও কিছু কথিত রাজনৈতিক বড় ভাই। অপরাধ বিজ্ঞানী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বয়সে ছোটদের সহজেই মোটিভেশনে অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যায়। তাই দাগি অপরাধীরা ছোট শিশুদের ব্যবহার করে ছিনতাই ও মাদকের মতো ভয়ঙ্কর কাজে সম্পৃক্ত করছে। এটা ভয়ঙ্কর কালচারে পরিণত হচ্ছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। যেসব শিশু অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে, তাদের সংশোধনের জন্য সরকারি উদ্যোগে পুনর্বাসন কেন্দ্রে নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।’
সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) মাহাতাব উদ্দিন বলেন, ‘অপরাধের সঙ্গে শিশুদের সম্পৃক্ততার বিষয়টা আমাদেরও নজরে এসেছে। এরই মধ্যে কেউ কেউ গ্রেফতারও হয়েছে। শিশুদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা কমাতে কাজ করছে পুলিশ।’ এক অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর ১০ থানা এলাকার ২৫টি স্পটে সক্রিয় রয়েছে ১০টি শিশু অপরাধী চক্র। চক্রগুলোর একেক দলে রয়েছে সর্বনিম্ন তিন থেকে ছয় সদস্য। এদের সবাই ভবঘুরে পথশিশু। প্রত্যেকের বয়স ১২ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। এ শিশুরা চিহ্নিত স্পটে ছিনতাই, মোবাইল টানা এবং মাদকের ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করছে। নগরীর কোতোয়ালি থানার টাইগারপাস থেকে স্টেশন রোড এলাকা পর্যন্ত কয়েকটি স্পটে সক্রিয় রয়েছে তিনটি শিশু ছিনতাইকারী চক্র। এ চক্রের সদস্যরা যাত্রী এবং সাধারণ লোকজনকে জিম্মি করে ছিনতাই ও ছোঁ মেরে মোবাইল নিয়ে যায়। আবার কেউ কেউ ওই এলাকায় মাদকের ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করে। নগরীর পাঁচলাইলাইশ থানাধীন শেভরন ডায়াগনস্টিক এলাকা থেকে মেডিকেল মোড় পর্যন্ত সক্রিয় রয়েছে দুটি গ্রুপ। এ চক্রের সদস্যরা মেডিকেল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে টাকা-পয়সা ও মোবাইল ছিনতাইয়ে সম্পৃক্ত। নগরীর ডবলমুরিংয়ের দেওয়ানহাট থেকে রেললাইন পর্যন্ত সক্রিয় রয়েছে আরও দুটি শিশু অধরাধী চক্র। এরা মাদকের ক্যারিয়ার এবং মোবাইল টানা পার্টির কাজ করে। খুলশী থানার অন্তর্গত মর্তিঝণা, লালখান বাজার, আমবাগান এলাকায় সক্রিয় রয়েছে শিশু অপরাধীদের একাধিক গ্রুপ। বায়েজীদ থানার অন্তর্গত শেরশাহ, অক্সিজেন, বাংলাবাজার এলাকায় রয়েছে কমপক্ষে তিনটি গ্রুপ। এ ছাড়া বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ইপিজেড মোড়, আগ্রাবাদ ছোট পুল, বড়পুল, আগ্রাবাদ মোড়, ইপিজেড মোড়, সিমেন্ট ক্রসিং, নারিকেল তলা এলাকায়ও রয়েছে শিশু অপরাধীদের বিচরণ।
এ নিয়ে কথা হয় সিএমপির একাধিক থানার ওসির সঙ্গে। তারা বলেন, শিশু অপরাধীদের ছায়া হিসেবে রয়েছেন কিছু রাজনৈতিক নেতা। তারা নিজেদের প্রয়োজনে শিশুদের ব্যবহার করছেন। আবার তাদের ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িত হওয়ার জন্য উৎসাহও দিচ্ছেন। কতিপয় রাজনৈতিক নেতার বাধার কারণে শিশু অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
সম্প্রতি শিশু অপরাধী গ্রেফতারে নেতৃত্ব দিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ওসি জাহিদুল কবীর। তিনি বলেন, শিশু অপরাধী চক্রগুলোর একেকটিতে তিন থেকে ছয় সদস্য রয়েছে। তারা ছিনতাই ও মোবাইল টানা পার্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে তথ্য পেয়েছি। এরই মধ্যে একটি চক্রের কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও দুটি চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে।