বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। তবে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাধারণ ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে মহানগর ও থানা বিএনপির কমপক্ষে ২৫ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আরও কয়েকজন প্রার্থী আছেন, যারা সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও বিএনপি পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচিত। কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপির অনেক নেতাই এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য হিসেবে পরিচিত। অনেকের পদ-পদবি না থাকলেও তারা সরাসরি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এদের মধ্যে কয়েকজন বর্তমান কাউন্সিলর, কেউ ওয়ার্ডের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার মতো অবস্থাও আছে তাদের। একদিকে এলাকাবাসী, অন্যদিকে দল। আছে দল থেকে বহিষ্কারের ভয়। এমন অবস্থায় দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে আগ্রহী বিএনপির এসব নেতা।
এখন পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকা এসব নেতার দাবি, মানুষের ভালোবাসাকে অবজ্ঞা করতে না পারায় তারা প্রার্থী হয়েছেন। এ ছাড়া কাউন্সিলর হলে দলীয় কর্মী-সমর্থকরা উপকার পাবেন। এ নির্বাচন বর্জন করলে দলই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই দলের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত। রাজশাহী সিটি নির্বাচন ২১ জুন। দলীয় সূত্র মতে, সিটির ৩০টি ওয়ার্ড থেকে এবার অন্তত ২৫ বিএনপিপন্থি নেতা কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে শাহ মখদুম থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বেলাল হোসেন, ১৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক টুটুল, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আবদুস সোবহান লিটন, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে বোয়ালিয়া থানা বিএনপির সহসভাপতি দিলদার হোসেন, ১১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি কিনু, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে বোয়ালিয়া থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম মিলু, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি জিল্লুর রহমান, ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আনোয়ারুল আমিন আযব, ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা আশরাফুল হাসান (বাচ্চু)। এ ছাড়া সংরক্ষিত ১৩, ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক সামসুন নাহার এবং সংরক্ষিত ৬, ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর মহিলা দলের সভাপতি মুসলিমা বেগম বেলি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুজ্জামান টিটো ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও প্রার্থী না হওয়ার কথা জানিয়েছেন।১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও শাহ মখদুম থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বেলাল হোসেন বলেন, ‘দলীয় ব্যানারে এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না। এলাকার সাধারণ মানুষ আমাকে চান, তাই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। দল সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নিলেও করার কিছু নেই।’ ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আনোয়ারুল আমিন আযব বলেন, ‘দলের কোনো প্রসঙ্গ কাউন্সিলর পদের জন্য নেই। এলাকার মানুষের কথা বিবেচনা করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। দল সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিলে নিতে পারে।’
রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ইশা বলেন, ‘আমরা বেশকিছু কাউন্সিলর প্রার্থীর নাম শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু এখনো চূড়ান্তভাবে প্রার্থী কেউ হননি। তাই কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সর্বশেষ কারা নির্বাচনে থাকছে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো প্রার্থী এ নির্বাচনে অংশ নেবে না। এমনকি আমরা ভোট দিতেও যাব না।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, যারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হবেন, তারা দলের কাছে বেইমান হিসেবে চিহ্নিত হবেন। কোনো অজুহাতে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই উল্লেখ করে মিনু বলেন, ‘মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব। যারা প্রার্থী থেকে যাবেন, ধরে নেওয়া হবে তারা বিএনপির সঙ্গে থাকতে চান না। আজীবন বহিষ্কার হবেন তারা।’
কর্মী চাঙা করতে তৎপরতা : ভোটের মাঠ অনেকটা এককেন্দ্রিক। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার শঙ্কা নেই। তার পরও নির্ভার থাকতে চান না আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। ওয়ার্ড পর্যায়ে কর্মী চাঙা করতে দিনরাত চলছে মতবিনিময়। পাড়ায় পাড়ায় মতবিনিময় করছেন লিটন ও তাঁর স্ত্রী। গতকাল লিটনের উন্নয়ন কর্মকান্ডের লিফলেট বিতরণ করেছেন বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে বিজয়ী করতে ৩০ নম্বর ওয়ার্ড (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের মতবিনিময় সভা হয়। এতে অংশ নেন নগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি শাহীন আকতার রেণী। রেণী বলেন, সব ক্ষেত্রে রাজশাহীর উন্নয়ন হয়েছে। রাজশাহীর উন্নয়নের এ ধারা ধরে রাখতে লিটনকে আরেকবার মেয়র নির্বাচিত করা প্রয়োজন। কর্মীরা যাতে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে লিটনের উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে কথা বলতে পারেন সেজন্য মতবিনিময় করা হচ্ছে। কর্মীরা সংগঠনের প্রাণ। তারাই প্রার্থীকে জয়ী করতে ভূমিকা রাখেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডের কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হচ্ছে; যাতে ২১ জুন নাগরিকরা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন, কর্মীরা যাতে সে উদ্যোগ নেন। গতকাল সকালে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় লিটনের উন্নয়ন কর্মকান্ডের লিফলেট বিতরণ করেছেন বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। এ সময় তাঁর সঙ্গে সংস্কৃতি কর্মীরা ছিলেন। উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতে লিটনকে আরেকবার নির্বাচিত করার আহ্বান জানান তিনি।