শিরোনাম
সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

ডেঙ্গুর হটস্পট এখন রোহিঙ্গা শিবির

১১ নির্দেশনা স্বাস্থ্য অধিদফতরের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডেঙ্গুর হটস্পট এখন রোহিঙ্গা শিবির

চলতি বছর কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে ১ হাজার ৬৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে এ ক্যাম্পে ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা কঠিন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তারা বলছে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদফতরে এসব তথ্য তুলে ধরেন অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর সিডিসি (কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল) অধ্যাপক মো. নাজমুল ইসলাম। সেখানে বলা হয়, রোহিঙ্গা বাদে সারা দেশে চলতি বছর ১ হাজার ৫৩৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। তার মধ্যে ঢাকা মহানগরে ৯৭১ জন এবং ঢাকা মহানগরের বাইরে ৫৬২ জন।

নাজমুল ইসলাম আরও বলেন, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। গত বছর সেখানে ১৭ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল। এ বছরও সেখানে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অত্যন্ত বেশি। কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে রোগীর সংখ্যা উপেক্ষা করার মতো নয়। রোহিঙ্গারা সীমিত জায়গায় থাকে। সেখানে পানি সরবরাহ না থাকায় পানি জমা করে রাখতে হয়। জমা করে রাখা পরিষ্কার পানি এডিস মশা প্রজননের জন্য ভালো জায়গা। রোহিঙ্গা শিবিরে সাধারণ মানুষের চলাফেরা সীমিত থাকাকে কারণ হিসেবে দেখছেন নাজমুল ইসলাম।

স্বাস্থ্যকর্মীদের বিধিনিষেধের মধ্যে কাজ করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা দিবারাত্রি কাজ করছেন। তারপরও মনে রাখতে হবে, মশার প্রজননক্ষেত্র যদি ধ্বংস করা না যায়, এটা কিন্তু প্রাক-মৌসুম, তাহলে পুরোপুরি মৌসুম শুরু হয়ে গেলে এর পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হতেই পারে। জনবসতি যেখানে বেশি, সেখানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়?

ঢাকা দক্ষিণে রোগী বেশি এ ধরনের পরিসংখ্যান বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে বলে মনে করেন নাজমুল ইসলাম। তার মতে, উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটিতেই ডেঙ্গু রোগী আছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তুলনায় দক্ষিণে গৃহায়ণ পরিকল্পিতভাবে হয়নি। বড় হাসপাতালগুলো ঢাকা দক্ষিণে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর বলেছে, সবচেয়ে কম রোগী রংপুর, সিলেট, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও খুলনা বিভাগে। আর সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী ঢাকার পর চট্টগ্রাম বিভাগে, তারপর বরিশাল বিভাগে। এ বছর জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ১৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এটি অত্যন্ত বেদনার বলেছেন তারা। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৬৭ জন। তার মধ্যে ঢাকা মহানগরে ৫৮ জন, ঢাকার বাইরে নয়জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের এ অনুষ্ঠানে কথা বলেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক আহমেদুল কবির, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক রাশেদা ইসলাম, লাইন ডিরেক্টর (এনসিডিসি) অধ্যাপক মো. রোবেদ আমিন, অধ্যাপক কাজী তারিকুল ইসলাম প্রমুখ। স্বাস্থ্য অধিদফরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ১১ দফা সুপারিশ করেছে। সুপারিশগুলো হলো- সব সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগ স্ক্রিনিংয়ের পর্যাপ্ত কিটের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় ডেঙ্গু স্ক্রিনিংয়ের চার্জ ১০০ টাকার বেশি হওয়া যাবে না। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি বেড়ে গেলে আবাসিক চিকিৎসক ও আরএমওর কক্ষে অতিরিক্ত মেডিসিন বিশেষজ্ঞকে দায়িত্ব দিতে হবে। যাতে আগত ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত না হয়। হাসপাতালগুলোয় ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত মশারির ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট পরিচালককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কোনো ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার জন্য প্লাটিলেট প্রয়োজন হলে জাতীয় গাইড লাইন অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে।

সপ্তাহের সাত দিনই ২৪ ঘণ্টা ল্যাব খোলা রাখতে হবে। সরকারিভাবে ২১টি সেন্টারে প্লাটিলেট সরবরাহের ব্যবস্থা আছে, কোনো রোগীর প্লাটিলেট প্রয়োজন হলে উল্লিখিত ২১টি সেন্টার থেকে সংগ্রহ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার সহযোগিতায় হাসপাতালের চারপাশ নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। হাসপাতাল কম্পাউন্ডে ডাব বিক্রি বন্ধ করতে হবে। হাসপাতালের অভ্যন্তরে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। ডেঙ্গু একটি ভেক্টর বাহিত রোগ, বিধায় জিও লোকেশন ট্রেসিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মোবাইল নম্বর এবং পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা অবশ্যই সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করে সংরক্ষণ করতে হবে। আইইডিসিআর এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার যৌথ উদ্যোগে কন্ট্রোল রুম খুলতে হবে। আগ্রহী চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখায় যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। এডিস মশার লার্ভা নিধনে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোয় ডেঙ্গু শনাক্তকরণের এনএস১ অ্যান্টিজেন (সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা), আইজিজি এবং আইজিএম (সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা), সিবিসি (সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা) পরীক্ষা সরকারের পূর্ব নির্ধারিত মূল্যে করতে হবে। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোয় ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা জাতীয় গাইড লাইন অনুযায়ী করতে হবে এবং প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগীর তথ্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস শাখাকে অবহিত করতে হবে।

সর্বশেষ খবর