মঙ্গলবার, ৩০ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

নির্বাচনী বছরেও বরাদ্দ কমছে সামাজিক নিরাপত্তায়

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

নির্বাচনী বছরেও বরাদ্দ কমছে সামাজিক নিরাপত্তায়

আসছে জুনে যে বাজেট ঘোষণা করা হবে, এটি এ সরকারের শেষ বাজেট। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বাজেটের মাঝামাঝি সময় জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। সে কারণে এ বাজেটটিকে

নির্বাচনী বাজেট হিসেবে অভিহিত করা যায়। সাধারণত নির্বাচনী বাজেটে ভোটারদের তুষ্ট রাখতে নানা ধরনের প্রণোদনামূলক উদ্যোগ থাকে। দরিদ্র মানুষের জন্য বাড়ানো হয় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি। তবে সরকার চাইলেও এবার তার সম্ভব হচ্ছে না; বরং নির্বাচনী বছরের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপির অনুপাতে বরাদ্দ কমছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানান, ২০২১-২২ সালের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ ছিল জিডিপির প্রায় ৩ শতাংশের ওপরে; চলতি বাজেটে তা কমিয়ে ২ দশমিক ৬ শতাংশ করা হয়। আগামী বাজেটে সেটি জিডিপির ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, করোনা মহামারির কারণে চলতি বাজেটে বিভিন্ন প্রণোদনা সুবিধা ছিল। এসব সুবিধা নতুন বাজেটে থাকছে না। এ কারণে জিডিপির অনুপাতে সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ কমে যাচ্ছে। তবে অন্য একটি সূত্র বলছে, শুধু প্রণোদনা সুবিধা নয়, আইএমএফের শর্তের কারণে এবার সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনও এই খাত থেকে বাদ দিতে হচ্ছে। এ কারণেই সোশ্যাল সেফটিনেট ছোট হয়ে আসছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে অর্থ বিভাগ যে ১১৫টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির তালিকা করে, তাতে দেখা যায় অবসরভোগী সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন বাবদ ২৮ হাজার ৩৭ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ ৭ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা, করোনার কারণে ব্যাংকের সুদ মওকুফ ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য সুদ ভর্তুকি বাবদ ৫ হাজার কোটি টাকা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃত্তির জন্য ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। সরকার এগুলোকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি হিসেবে তালিকাভুক্ত করলেও আইএমএফ বলছে এগুলো দরিদ্র মানুষের জন্য সরাসরি কাজে লাগে না। এসব বাদ দিতে হবে। আর আইএমএফের শর্ত মানতে গিয়েই নতুন বাজেটে এই খাতগুলোর বরাদ্দ অন্য খাতে চলে যাচ্ছে- ফলে স্বাভাবিক কারণেই ছোট হয়ে যাচ্ছে দরিদ্র শ্রেণির বাজেট হিসেবে অভিহিত সোশ্যাল সেফটিনেট বা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি। সূত্র জানায়, জিডিপির অনুপাতে বরাদ্দ কমলেও বাজেটের বিপরীতে বরাদ্দ বাড়ানোর কৌশল ধরে রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার পেনশন, সঞ্চয়পত্রের সুদ ধরে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর বিপরীতে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। নতুন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সবমিলিয়ে মোট বরাদ্দ ১ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ বাড়বে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। কিছু ক্ষেত্রে উপকারভোগী ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর ঘোষণাও থাকতে পারে। বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দ বাড়িয়ে দেখানোর সমালোচনা করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন গত শনিবার ‘স্টেট অব দ্য বাংলাদেশ ইকোনমি’ পর্যালোচনা করতে গিয়ে বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যয় ফুলিয়ে-ফাপিয়ে দেখানো হয়; এটি শ্রেণিকরণ করতে হবে। এখানে এমন অনেক বরাদ্দ আছে যা দরিদ্র শ্রেণি পায় না। অবসর পেনশন, কৃষি ভর্তুকি এমন কি অবকাঠামো প্রকল্পে ঋণের অর্থ এই খাতে যুক্ত থাকে।

সর্বশেষ খবর