বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা
বায়েজিদ বোস্তামির পুকুর

অস্তিত্ব সংকটে বিরল কাছিম

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

অস্তিত্ব সংকটে বিরল কাছিম

চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামির পুকুরের কাছিম দেশের একমাত্র বিরল প্রজাতির ও নরম খোলসের প্রাণী; যা বড় আকৃতির জলজপ্রাণীও। এ পুকুরে আছে প্রায় ২০০ বছরের পুরনো কাছিম। সঠিক পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনার অভাব, দূষণ, প্রজননস্থল সংকোচন এবং রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না থাকায় বিপন্ন হয়ে পড়েছে কাছিমের প্রজননব্যবস্থা। ফলে অস্তিত্ব সংকটে প্রাণীটি। আন্তর্জাতিক প্রাণী সংরক্ষণ সংস্থা আইইউসিএন বোস্তামি কাছিমকে অতিবিপন্ন প্রাণীর তালিকায় রেখেছে। ফলে প্রাণীটি আছে বিলুপ্তির ঝুঁকিতেও।

জানা যায়, মার্চ-এপ্রিলে প্রাণীটি ডিম ছাড়ে। এরপর দু-তিন মাস প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষ করে ডিম থেকে কাছিম প্রজনন করা হয়। প্রজনন নিয়ে সরকারি কোনো উদ্যোগ নেই। ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্স (সিসিএ) নামে একটি সংগঠন ২০১৯ সাল থেকে ইনকিউবেটরের মাধ্যমে কাছিম প্রজনন করছে। বর্তমান মৌসুমে প্রায় ৭৫০টি ডিম ইনকিউবেটরে রাখা হয়। তবে অতিমাত্রায় গরম ও বৈরী আবহাওয়ায় অনেক ডিম নষ্ট হয়ে গেছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) ২০১২ সালে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বায়েজিদ বোস্তামির কাছিমের আবাসস্থল পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করেছেন হাই কোর্ট। আদালতের আদেশের ১১ বছর অতিবাহিত হলেও কাছিমের আবাসস্থলের উন্নয়নে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সিসিএ’র প্রোগ্রাম সমন্বয়ক মো. ফাহিম বলেন, কয়েক বছর ধরে ডিম পাড়ার মৌমুমে তা সংগ্রহ করে ইনকিউবেটরের মাধ্যমে প্রজনন করা হচ্ছে। তবে প্রতি বছর যে পরিমাণ কাছিম প্রজনন করা হয়, তা পুকুরে টিকছে না। গজার, পাঙ্গাশ মাছসহ বিভিন্ন প্রাণী কাছিম খেয়ে ফেলছে। এ কারণে কাছিমের সংখ্যা বাড়ছে না।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘উপযুক্ত পরিবেশ, প্রয়োজনীয় সুরক্ষা, উদ্যোগ ও পরিকল্পনা না থাকায় বোস্তামির কাছিম অস্তিত্ব সংকটে। বোস্তামির পুকুরটির আগের পরিবেশ নেই। দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে। তা ছাড়া নিয়মিতই এটি দূষণ হচ্ছে। তাই কাছিমের বাঁচা, পুকুর দূষণমুক্ত রাখা, ধর্মীয় ভাবাবেগ অক্ষুণ্ন রেখে আগত ধর্মপ্রাণ মানুষের খাবার দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে একটি গাইডলাইন দিয়েছিলাম। প্রথম দিকে তা পালন করলেও পরে আর প্রতিপালন হয়নি। ফলে পুকুরটি এখন দখল-দূষণে বিপর্যস্ত।’ বেলার নেটওয়ার্ক মেম্বার আলীউর রহমান বলেন, ‘পুকুরের চার পাড় সংরক্ষণ করে সেখানেই কাছিমের প্রজননব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য হাই কোর্টের নির্দেশ আছে। অথচ কর্তৃপক্ষ সেই আদেশের তোয়াক্কা করছে না। জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা জানিয়েছেন। আশা করি বোস্তামি কাছিমের আবাসস্থলকে পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর