রূপকথার গ্রাম চকচান্দিরা। এক গ্রামেই রয়েছে পাশাপাশি খনন করা ছোটবড় ৩৬৫টি পুকুর। নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার ইসবপুর ইউনিয়নে প্রত্যন্ত এ গ্রাম। কথিত আছে, অষ্টম শতাব্দীর পালবংশের কোনো এক রাজার রাজ্য ছিল এখানে। রাজপ্রাসাদ, সৈন্য, রাজকার্য নিয়ে খুব সুখেই দিন কাটছিল তার। কিন্তু হঠাৎ কী এক অসুখে পড়লেন রানি। কিছুতেই সেই অসুখ আর ভালো হয় না। দিন দিন শুধু রানির স্বাস্থ্যের অবনতিই হচ্ছিল। রাজার মনে শান্তি নেই। রাজপ্রাসাদ থেকে উধাও হলো সুখও। রানির অসুখ সারানোর জন্য সারা রাজ্যে এলান করা হলো। রাজ্যের সব বৈদ্য এলেন রাজসভায়। তারপর এক বৈদ্য জানালেন, রানির অসুখ ভারী কঠিন। সারতে হলে রাজাকে ৩৬৫টি পুকুর খনন করতে হবে। আর বছরের এক এক দিন রানি এক এক পুকুরে গোসল করবেন। বছরের প্রতিটি দিন আলাদা পুকুরে গোসল করলে তবেই সুস্থ হবেন রানি। এরপর রাজা তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রীর জন্য রাজ্যে এই ৩৬৫ পুকুর খনন করেন। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে সেই রাজ্য, রাজা আর রাজপ্রসাদ। কিন্তু মানুষের মুখে মুখে এখনো রয়ে গেছে সেই লোকগাথা। চকচান্দিরা গ্রামে পৌঁছেই চোখে পড়ে বিশাল এক বিল। নাম তার ঘুকশির বিল। বিলের পাশে সারি সারি পুকুর। গ্রামজুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এই ৩৬৫টি পুকুর। স্থানীয়রা এ জায়গাটিকে বলে তিন শতিনা। পাশাপাশি ৩৬৫টি পুকুর কালের সাক্ষী হয়ে এখনো রয়েছে এখানে। রাজপ্রাসাদ বা অন্য কোনো কিছুর ধ্বংসাবশেষ চোখে পড়ে না। জানাও যায়নি এর সঠিক ইতিহাস। চকচান্দিরা গ্রামের বাসিন্দা মুরশেদুল আলম মুর্তুজা বলেন, এটি ইতিহাসের বিরল একটি ঘটনা। বাবা, দাদা ও স্থানীয়দের কাছ থেকে এসব পুকুর খননের গল্প শুনেছি। তবে সেই রাজার নাম ও অন্য কোনো ইতিহাস জানি না। ওই গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম (৮০) জানান, রাজা-রানির এ কাহিনি এখানকার প্রায় সবার জানা। কালের বিবর্তনে কিছু পুকুর ভরাট হয়েছে। বাবা-দাদারাও এর সঠিক ইতিহাস জানতেন না। তারাও লোকমুখে এসব শুনেছেন। কিছু পুকুর সরকারিভাবে লিজ দেওয়া হয়েছে এবং বনায়ন করা হয়েছে। সেগুলোয় মাছ চাষ করছেন স্থানীয়রা। শিক্ষক আবু ফিরোজ হোসেন বলেন, একসঙ্গে এতগুলো পুকুর দেখা সম্ভব না। এর প্রকৃত ইতিহাস উদঘাটন ও একে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হলে দর্শনার্থীর কাছে আকর্ষণীয় হতে পারে। স্থানীয় সংবাদকর্মী আবদুল মালেক বলেন, পুকুরগুলো আদিকাল থেকে আছে। এতগুলো পুকুর একই জায়গায় দেশের কোথাও আর নেই। ধামইরহাট এম এম ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও গবেষক শহিদুল ইসলাম জানান, গ্রামটিতে যেসব পুকুর খনন করা হয়েছিল, তার ৩৬৫টি পুকুরের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, অষ্টম শতাব্দীতে পাল শাসনামলে এসব পুকুর খনন করা হয়েছিল। এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রাচীনকালের অনেক নিদর্শন। তার অন্যতম চকচান্দিরার ৩৬৫টি পুকুর। নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর শরিফুল ইসলাম খান বলেন, অনেক প্রাচীন দর্শনীয় স্থান আছে এ জেলায়। আবার অনেক স্থান পরিচিতি ও সংরক্ষণের অভাবে বিলুপ্তপ্রায়। পালবংশের শাসনের শেষ দিকে পুকুরগুলো খনন করা হয়েছিল বলে ধারণা পাওয়া যায়। এখনো পুকুরগুলো অক্ষত রয়েছে। নওগাঁর জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান বলেন, এখানে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সমন্বয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চান্দিরা গ্রামের ওই পুকুরগুলোয় যাতে খুব সহজেই যাওয়া যায়, সেজন্য রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
শিরোনাম
- একনজরে আজকের বাংলাদেশ প্রতিদিন (১৯ জুলাই)
- বৈষম্য সংস্কৃতির শত্রু দারিদ্র্যও
- নিউজিল্যান্ডের কাছে পাত্তাই পেল না জিম্বাবুয়ে
- সেন্টমার্টিনে এক লাখ ৪০ ইয়াবাসহ গ্রেফতার ১৭
- এনসিপির ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ খতিয়ে দেখা দরকার : এ্যানি
- ১৩ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ বাটলারের
- মসজিদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা দ্রুত গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে : ধর্ম উপদেষ্টা
- উলভসের হল অব ফেমে জায়গা পেলেন জটা
- চূড়ান্ত সংগ্রামের ঘোষণা দিয়েছিলেন তারেক রহমান : রিজভী
- শ্রোতাদের জন্য হাবিবের নতুন গান ‘দিলানা’
- কোটি মানুষের একটাই দাবি—ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া : মঈন খান
- পঞ্চগড়ে বিএনপির মৌন মিছিল
- ইন্টারনেট শাটডাউন রোধে আসছে আইন : ফয়েজ আহমদ
- কাপ্তাই হ্রদের উন্নয়নে দুই উপদেষ্টার মতবিনিময়
- সরকারের কোলে একদল, কাঁধে আরেক দল : মির্জা আব্বাস
- চলতি মাসে জুলাই সনদ না হলে দায় সরকার আর ঐকমত্য কমিশনের : সালাহউদ্দিন
- সুনামগঞ্জে পানিতে ডুবে ৩ জনের মৃত্যু
- মার্কিন কূটনীতিকদের বিদেশি নির্বাচন নিয়ে মতামত না দিতে নির্দেশ
- বাফুফের ফুটসাল ট্রায়াল শুরু রবিবার
- গোপালগঞ্জে কারফিউয়ের সময় আরও বাড়ল