মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএসএমইউ) ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে পুলিশ বাদী হয়ে শাহবাগ ও পল্টন মডেল থানায় মামলা দুটি দায়ের করে।
মামলা দুটিতে নাম উল্লেখ করা হয়েছে মোট ২০ জনের। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে জামায়াত-শিবিরের ৫ হাজার ১৫০ জনকে। শাহবাগ থানায় দায়ের হওয়া মামলায় আসামির তালিকায় রয়েছেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী। মামলাগুলোয় সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর হামলা, মারধর ও গাড়িতে আগুন দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। শাহবাগ থানায় দায়ের হওয়া মামলার আসামিরা হলেন হামিদুর রহমান আজাদ, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী, ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরের নেতা মো. সাইফুল ইসলাম ও অজ্ঞাতনামা ৪৫০০-৫০০০ জন। পল্টন মডেল থানায় দায়ের হওয়া মামলার আসামিরা হলেন মো. ইমতিয়াজ চৌধুরী, মো. সজল মোল্লা, মো. সাহাবাজ হোসেন, মনির হোসেন, মো. তারেক হাসান, মো. মনজুর, মো. উজ্জ্বল মিয়া, মো. মতিউর রহমান, আলামিন, মো. আলী, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. মহিউদ্দিন, জামিনুর রহমান, সাইফুল ইসলাম-২, ইউসুফ ফকির, রহমাতুল্লাহ ও জামায়াত-শিবিরের অজ্ঞাতনামা ১০০-১৫০ জন। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ বলেন, বিএসএসএমইউ ও শাহবাগ মোড়ে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের ৫ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় চারজনের নাম উল্লেখ রয়েছে। এখনো কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। পল্টন মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাহ উদ্দীন মিয়া বলেন, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর গায়েবানা জানাজা ও দোয়া করাকে কেন্দ্র করে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় একটি মামলা করা হয়েছে। ঘটনার সময় আটক ১৬ নেতা-কর্মীকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া মামলায় জামায়াত-শিবিরের অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১৫০ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এদিকে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চিকিৎসা দেওয়া বিএসএমএমইউ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামানকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় জিডি করেন ওই চিকিৎসক। জিডিতে ডা. জামান উল্লেখ করেন, ‘আমি বিএসএমএমইউয়ে হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। রবিবার রাতে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী অসুস্থ অবস্থায় সেখানে ভর্তি হন। সাঈদী বিএসএমএমইউয়ের হৃদরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক চৌধুরী মেশকাত আহমেদের তত্ত্বাবধানে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। সোমবার সেখানে সাঈদী মৃত্যুবরণ করেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের একজন সদস্য হিসেবে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু কতিপয় ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও ইউটিউবে বিভিন্ন আইডি থেকে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং হত্যার হুমকি দিচ্ছে।’ জিডিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘আমি বর্তমানে কতিপয় ব্যক্তির আচরণে ভীত ও শঙ্কিত। কয়েকটি ফেসবুক ও ইউটিউব পেজের ব্যবহারকারী এবং তাদের অনুসারীরা যে কোনো সময় আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের খুন-জখমসহ বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে।’ ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. পারভেজ ইসলাম জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সাঈদীর জানাজা নিয়ে সহিংসতার তিন মামলায় আট হাজার আসামি:
কক্সবাজারের চকরিয়ায় মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা শেষে সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হয়ে একজনের মৃত্যু ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। গতকাল নিহত মো. ফোরকানের স্ত্রী নুরুচ্ছফা বেগম বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা, থানার এস আই মো. আল ফোরকান বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে এবং পুলিশ এসল্ট মামলা করেন। এসব মামলায় এজাহার নামীয় ১৫০ জন ও অজ্ঞাত ৮ হাজার ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে হত্যা মামলায় এজাহার নামীয় কোনো আসামি নেই।
জামায়াতের দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা : ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও চট্টগ্রামে একজন কর্মী নিহতের ঘটনায় দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। কর্মসূচির মধ্যে আছে- আগামীকাল শুক্রবার দেশব্যাপী দোয়া অনুষ্ঠান ও আগামী বুধবার সারা দেশে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিল। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সংবাদ সম্মেলনে দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবু তাহের মুহাম্মদ মাসুদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমির আবদুর রহমান মুসা উপস্থিত ছিলেন।