মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস

আরও পাঁচ চিকিৎসক গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে আরও পাঁচ চিকিৎসককে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তারা হলেন- ডা. ইউনুচ উজ্জামান খাঁন তারিম (৪০), ডা. লুইস সৌরভ সরকার (৩০), ডা. মুসতাহিন হাসান লামিয়া (২৫), ডা. শর্মিষ্ঠা মণ্ডল (২৬) এবং ডা. নাজিয়া মেহজাবিন তিশা (২৪)। একই অভিযোগে ১৩ আগস্ট সাত চিকিৎসককে গ্রেফতার করেছিল সংস্থাটি। এ নিয়ে এ পর্যন্ত ১২ জন গ্রেফতার হলেন। এদের মধ্যে আটজন দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

গতকাল সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমানের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানানো হয়েছে।

তিনি জানান, গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের দেওয়া বিপুল সংখ্যক ব্যাংকের চেক এবং অ্যাডমিট কার্ড জব্দ করা হয়। এ চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীম উদ্দিন ভূইয়া। তার কাছ থেকে একটি গোপন ডায়েরি জব্দ করা হয়। এতে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা তার চক্রের অন্য সদস্যদের নাম পাওয়া যায়। সিআইডি জানায়, ডা. ইউনুচ উজ্জামান খাঁন তারিম খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক। তিনি খুলনা শহরের আলোচিত মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার    থ্রি ডক্টরসের মালিক। মূল পেশা বাদ দিয়ে জড়ান কোচিং ব্যবসায়। প্রতিষ্ঠা করেন থ্রি ডক্টরস কোচিং খুলনা। তারিম নিজেকে চিকিৎসক তৈরির কারিগর পরিচয় দেন। মেডিকেল প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে অবৈধভাবে শত শত শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। তারিম ও তার স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে প্রায় ২৫ কোটি টাকার লেনদেন পাওয়া গেছে। হাসপাতাল, ফ্ল্যাট, জমি, মাছের ঘের, হোটেল শেয়ারসহ গড়েছেন বিপুল সম্পদ। ডা. তারিমের বিরুদ্ধে একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এর আগেও প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠে।

ডা. লুইস সৌরভ সরকার খুলনা মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তিনি থ্রি ডক্টরস-এর শিক্ষক। বর্তমানে একটি এনজিওতে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত। ডা. মুসতাহিন হাসান লামিয়া ২০১৫-১৬ সেশনের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধায় ১১তম স্থান অর্জন করেন। তিনি ডা. তারিমের স্পেশাল ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাকে বাসায়ও পড়াতেন তারিম। কম মেধাবী হওয়ার পরও তারিমের কাছ থেকে প্রশ্ন পেয়ে তিনি মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন। জাতীয় মেধায় ১১তম হওয়ার পরও তিনি চারটি ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষায় সব সাবজেক্টেই ফেল করেন। পরে একাধিকবারের চেষ্টায় পাস করেছেন। প্রশ্ন পেয়ে লামিয়ার চান্স পাওয়ার বিষয় খুলনার চিকিৎসক মহলে ওপেন সিক্রেট। লামিয়ার ভর্তির জন্য তার স্বামী শেখ ওসমান গনি ও ডা. তারিমের মাঝে প্রায় ১৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে বলে জানা যায়। ডা. শর্মিষ্ঠা মণ্ডল ও ডা. নাজিয়া মেহজাবিন তিশা ২০১৫-১৬ সেশনের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ডা. তারিমের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র কিনে খুলনা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ২০২০ সালে এই চক্রটির তথ্য বেরিয়ে আসে একটি টেলিভিশনের রিপোর্টে। এরপর অভিযান শুরু করে সিআইডি। এদিকে গতকাল খুলনা বিএমএ ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চার চিকিৎসকের পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের সন্তানদের নির্দোষ দাবি করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে ডা. শর্মিষ্ঠা মণ্ডলের বাবা ডা. দীনবন্ধু মণ্ডল, ডা. তিশার মা নিলুফার ইয়াসমীন, ডা. লামিয়ার মা ফেরদৌস আক্তার ও ডা. লুইসের মা মেটোলেট সরকার উপস্থিত ছিলেন। তারা অভিযোগ করেন সাদা পোশাকধারীরা কোনো কথা বলার সুযোগ দেয়নি তাদের। তল্লাশির নামে ব্যক্তিগত কাগজপত্র ও ব্যবহার্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস তছনছ করা হয়েছে। তাদের সন্তানরা খুলনার ডা. তারিমের থ্রি ডক্টরস কোচিংয়ে পড়াশোনা করেছে ও খুলনা মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করেছে। ডা. লুইস ওই কোচিংয়ে শিক্ষকতায় জড়িত।

 

সর্বশেষ খবর