সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) প্রায় সব থানাই ছিল পুলিশবিহীন। এ পরিস্থিতিতে রাজধানীর কিছু এলাকায় রাতে ডাকাতি এবং ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। ডাকাতি ঠেকাতে বৃহস্পতিবার অনেক এলাকার বাসিন্দা নির্ঘুম রাত কাটান বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টা থেকে রাজধানীর ডেমরা, নন্দীপাড়া, খিলগাঁও, বাসাবো, বনশ্রী, রামপুরা, গোড়ান, শাঁখারী বাজার, কাঁঠালবাগান, মোহাম্মদপুর এবং মিরপুর এলাকায় ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসব এলাকায় মসজিদে মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, ডাকাত দল এলাকায় প্রবেশ করেছে শুনে সবাই সতর্ক হন। ইতোমধ্যে মোহাম্মদপুর থেকে কয়েকজন, মিরপুরের মাজার রোড থেকে তিনজন ও শনিরআখড়া থেকে এক ডাকাতকে আটক করেন তারা। রাতে ডাকাতির ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এলাকাবাসী। ডাকাতির ঘটনায় সেনাবাহিনী ও বিজিবির দেওয়া জরুরি নম্বরে ফোন করেন অনেকেই।
শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর পুলিশের অনুপস্থিতিতে গত তিন ধরে রাতে ডাকাত আতঙ্ক দেখা দেয়। ফলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় টিম গঠন করে পাহারা দেন এলাকাবাসী। মোড়ে মোড়ে লাঠি ও বাঁশ হাতে ডাকাতদের প্রতিহত করতে মাঠে নামেন এলাকাবাসী।
পুলিশ বলছে, ঢাকাসহ সারা দেশে ৪ শতাধিক থানায় হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। অবস্থা বিবেচনায় থানায় বা নিজ নিজ কার্যালয়ে থাকা কেউ নিরাপদ মনে করছেন না। কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজনের বাসায় আত্মগোপনে রয়েছেন। আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর রোষ কাটছেই না। কয়েকটি থানা থেকে সেনাসদস্যরা পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করেন।
গত ৭ আগস্ট আইএসপিআর থেকে জানানো হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে জনসাধারণের জানমাল ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন রয়েছেন। যে কোনো নাশকতামূলক কর্মকান্ড, হানাহানি এবং প্রাণনাশের হুমকির সম্মুখীন হলে নিকটস্থ সেনাবাহিনী ক্যাম্পে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য প্রদান ও গুজবে আতঙ্কিত হয়ে সেনাবাহিনীকে বিভ্রান্ত করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। ঢাকায় ডাকাতি অথবা জননিরাপত্তা হানিকর কর্মকান্ড প্রতিরোধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) ফোন করার জন্য নগরবাসীকে বলা হয়েছে। ডাকাতি অথবা জননিরাপত্তা হানিকর কর্মকান্ড প্রতিরোধে ঢাকায় বিজিবির সহায়তার জন্য ০১৭৬৯-৬০০৫৫৫ এবং ০১৮৮৯-৬০০৫৫৫ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রামে রাত জেগে পাহারা : চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার থানা ভবন এবং বিভিন্ন এলাকার পুলিশ ফাঁড়িগুলোয় গতকাল পর্যন্ত স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। তাই চুরি-ডাকাতি ঠেকাতে গত চার দিন ধরে অনেকে রাত জেগে বাড়িঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয় পাহারা দিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে ধাওয়া দিয়ে পাঁচ ডাকাতকে আটক করে দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার ১৬ উপজেলায় বেশির ভাগ থানা পুলিশ শূন্য। বুধবার মধ্যরাতে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের বাড়িতে ডাকাতির জন্য জড়ো হলে সেনা ও নৌবাহিনীর টহল টিমের সদস্যরা সেখানে যান। তারা যাওয়ার আগেই ডাকাত দল পালিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বৃহস্পতিবার ছুরি দেখিয়ে ছিনতাই করা হয় সিএনজি অটোরিকশা। ওইদিন মধ্যরাতে আন্দরকিল্লা রাজাপুকুর লেইন, চেরাগী পাহাড় শরীফ কলোনি, হেমসেন লেইন, দেওয়ানজি পুকুর পাড় এলাকায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের ছোটাছুটি দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে কাজির দেউড়ি ও নন্দনকানন এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে পাঁচ ডাকাতকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেন স্থানীয়রা।
কাজীর দেউড়ি এলাকার বাসিন্দা দেবব্রত রয় জানান, রাত ২টার দিকে হঠাৎ মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয় এলাকায় ডাকাত এসেছে। এ সময় স্থানীয়রা একযোগে বাসা থেকে বের হয়ে ধাওয়া দিয়ে চারজনকে আটক করে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়। রাত আড়াইটার দিকে নন্দনকানন এলাকা থেকেও একজনকে আটক করে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এদিকে যে কোনো নাশকতামূলক কর্মকান্ড, হানাহানি এবং প্রাণনাশের হুমকির সম্মুখীন হলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের অনুরোধ করা হয়েছে।