দেশে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি ভারত থেকে ডিম আমদানি করেছে সরকার। এমনকি পর্যায়ক্রমে আরও আমদানি করা হবে বলে জানিয়েছে আমদানিকারকরা। কিন্তু ডিম আমদানির পরও দেশের বাজারে এ পর্যন্ত এর কোনো প্রভাব তো পড়েইনি, বরং সপ্তাহের ব্যবধানে ডজনপ্রতি পাঁচ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। এই ধারা অব্যাহত রয়েছে।
এছাড়া পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও বেড়েই চলেছে চালের দাম। গত দেড় মাসে খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি চালের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত। পর্যায়ক্রমে এখনও তা বেড়েই চলেছে।
গতকাল রাজধানীর খিলক্ষেত, বাড্ডা, রামপুরা এলাকার বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
ঢাকার বিভিন্ন বাজারে ফার্মের মুরগির প্রতিডজন বাদামি ডিম ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া, সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকায়। বাজারের তুলনায় পাড়া-মহল্লার দোকানে আরও পাঁচ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে মুরগির ডিম। মধ্যবাড্ডা কাঁচাবাজারে কেনাকাটা করতে আসা করিম হোসাইন বলেন, আমাদের মতো যারা নিয়মিত মাছ মাংস খেতে পারে না, তাদের জন্য ডিমই ছিল ভরসা। এখন দেখি দিন দিন এর দামও বাড়তে শুরু করেছে।
এদিকে, সরকার বিদেশ থেকে ডিম আমদানি বন্ধ না করলে ডিম ও মুরগির উৎপাদন বন্ধ করে দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানিয়েছে, বাংলাদেশে ডিমের চাহিদা ৪ কোটি পিস। ডিমের উৎপাদন রয়েছে সাড়ে চার কোটি পিস। চাহিদার থেকে যেখানে উৎপাদন বেশি হচ্ছে, সেখানে ডিম আমদানির প্রশ্নই আসে না। সরকারের ডিম আমদানির ভুল সিদ্ধান্তে প্রান্তিক খামারিরা লসের মুখে পড়বে। দেশীয় খামারগুলো বন্ধ হয়ে যাবে; এতে পরবর্তী সময়ে সংকট আরও বড় আকার ধারণ করবে। আড়তদার এবং চালের পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারিভাবে চালের মূল্য নির্ধারণের জন্য বাজার মনিটরিং করার কথা থাকলেও তা হয়নি। যার ফলে বাজারে পর্যাপ্ত চাল থাকা সত্ত্বেও এক ধরনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বড় বড় প্রতিষ্ঠান চালের দাম বাড়িয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে ছোট ব্যবসায়ীদের ওপর। দাম বৃদ্ধির বিষয়ে বেশ কয়েকটি অজুহাত দিয়েছেন চালের আড়তদাররা। তারা বলেন, দেশের ১৪ জেলায় বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণে বিপুল পরিমাণ চাল লাগায় চালের দাম বেড়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারেও চালের দাম বেড়েছে। ফলে ৫০ কেজি চালের প্রতি বস্তায় ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
পুরান ঢাকার বাবুবাজার ও আশেপাশের কয়েকটি খুচরা ও পাইকারি চালের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুচরা বাজারে জাত ও মানভেদে প্রতি কেজি দেশি বাসমতি ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। নাজির শাইল চাল ৬৮ থেকে ৮০ টাকা। মাঝারি মানের বিআর ২৮-২৯ নম্বর চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭৫ টাকা কেজি। এছাড়াও মোটা স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা, হাইব্রিড মোটা ৫৬ টাকা। এসব চালের মূল্য মাস দেড়েক আগেও কেজি প্রতি দুই থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত কম ছিল বলে জানান ব্যবসায়ীরা। সবজির বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় দাম কিছুটা বেড়েছে। বাজারে মুখিকচুর কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৫০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। পেঁপের কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধুন্দল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, কচুর লতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
শীতকালীন সবজি শিম ১৬০ থেকে ২০০ টাকা কেজি, ফুলকপি প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পাকা টম্যাটো প্রকারভেদে ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা এবং গাজর ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেবুর হালি ১০ থেকে ২০ টাকা, ধনে পাতার কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। লাল শাকের আঁটি ১৫ টাকা, লাউ শাক ৪০ টাকা, মুলা শাক ১৫ টাকা, পালং শাক ১৫ থেকে ২০ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকা, পুঁই শাক ৩০ টাকা এবং ডাঁটা শাক ২০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পিঁয়াজ ১০০ থেকে ১২০ টাকা, আদা ২৮০ টাকা, রসুন ২২০ টাকা এবং আলু কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সম্প্রতি বন্যার কারণে অনেক মুরগির খামারে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে রাজধানীর বাজারগুলোতে চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মুরগি। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। সোনালি মুরগি ২৬০ থেকে ২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি হাইব্রিড ২২০ টাকা, দেশি মুরগি ৫২০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ৩৩০ টাকা এবং সাদা লেয়ার ৩১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে গরুর মাংস কেজি প্রতি ৬৫০ থেকে ৭৮০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজিপ্রতি ১ হাজার ১৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।