সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের পরও অস্থিরতা কাটছে না নিত্যপণ্যের বাজারে। পিঁয়াজ, চাল, আলুসহ ছয় নিত্যপণ্যের দাম কমাতে শুল্ক ছাড় দিলেও বাজারে ইতিবাচক প্রভাব নেই। বরং হু হু করে বাড়ছে পিঁয়াজ ও আলুর দাম। কোনো উদ্যোগেই স্বাভাবিক হচ্ছে না বাজার। এক পণ্যের দাম কমে তো অন্যটির বাড়ে। এতে দূর হচ্ছে না নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের হাহাকার।
সরকারের ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের সর্বশেষ তথ্যমতে, বাজারে প্রতি কেজি দেশি পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগে পিঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। এ ছাড়া টিসিবির মতে, আমদানি করা পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ১২০ টাকায়। গত সপ্তাহে ছিল ৮০ থেকে ১১০ টাকা।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যমতে, বাজারে প্রতি কেজি দেশি পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫৫ টাকায়। এক মাস আগেও এসব পিঁয়াজের দাম ছিল ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা। এ ছাড়া আমদানির পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১২০ টাকা। গত মাসের এ সময়ে বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১১৫ টাকা। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, পিঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক করছাড় দেওয়ার পর ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পিঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। তারপরও দেশের বাজারে পিঁয়াজের দাম সহনীয় পর্যায়ে আসছে না। উল্টো দাম আরও বাড়ছে। বাজারে তদারকি না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে নতুনভাবে পিঁয়াজের বাজার অস্থির করছেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে এনবিআর আলু আমদানিতে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। একই সঙ্গে আলু আমদানিতে যে ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আছে, তা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়ছে। আলু আমদানিতে এ শুল্ক সুবিধা বহাল থাকবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। সরকারের নানা উদ্যোগের পর আলুর দাম আগের তুলনায় ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর জানায়, ভোক্তা পর্যায়ে আলুর যৌক্তিক দাম ৪৬ টাকা। তাদের মতে, বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। শুল্ক কমানোর আগে আলু বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। টিসিবির সর্বশেষ তথ্যমতে, বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায়। গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
চালের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে আমদানি শুল্ক ও রেগুলেটরি শুল্ক প্রত্যাহার করেছে সরকার। এরপরও চালের দাম বাড়তি। কারওয়ান বাজারের ফাতেমা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মো. মাহফুজ আলম বলেন, বেশ কয়েক মাস ধরেই চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। পাইকারি পর্যায়েই গত এক মাসে কয়েকবার দাম বেড়েছে। চলতি সপ্তাহেও বস্তাপ্রতি দাম বেড়েছে ৫০ টাকা। এখন মানভেদে মিনিকেট চাল বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ৩ হাজার ৩৫০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা চাল ব্রি-২৮ প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২৫ টাকা।
টিসিবির সর্বশেষ তথ্যমতে, বাজারে মোটা চাল (স্বর্ণা, চায়না ইরি) বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। মাঝারি চাল (আটাশ) বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬৫ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫৫ থেকে ৬২ টাকা। চিকন চাল (নাজির, মিনিকেট) বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এ চাল বিক্রি হয়েছে ৬৪ থেকে ৮০ টাকায়।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, আলুর দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেড়ে ৬০-৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ভারত থেকে আমদানি করা পিঁয়াজ ১২০ টাকা এবং দেশি পিঁয়াজ ১৫০ টাকা কেজি। দুই সপ্তাহ আগেও ডিমের বাজার ছিল অস্থির। প্রতি ডজন ডিম ১৬০-১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সরকার দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর এ ভোগ্যপণ্যটির দাম কমে ১৫০-১৫৫ টাকায় নেমেছে। তবে এ দাম সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি। ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩০০-৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজির বাজারে ছোট সাইজের ফুলকপি প্রতি পিস ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, বাঁধাকপিও প্রতি পিস ৫০ টাকা। এ ছাড়া লম্বা বেগুন ৬০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, করল্লা ৮০ টাকা ও বরবটি প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শিম প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা ও টম্যাটো ১৬০ টাকা। গোলবেগুন, কাঁকরোলের কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া প্রতি কেজি ৭০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, ধুন্দুল ৬০ টাকা, কচুরমুখি ৬০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৫০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া বলেন, নিত্যপণ্যের দাম কমাতে বাজার মনিটরিংয়ের বিকল্প নেই। ভোক্তা অধিদপ্তরের সঙ্গে সরকারের সংস্থা একসঙ্গে কাজ করলে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।