দেশে পোশাকশিল্পের অস্থিরতা কাটছেই না। এ বছরের শুরু থেকে মজুরি নিয়ে আন্দোলন, সরকার পতনের পর ঝুট ব্যবসার আধিপত্য নিয়ে কারখানায় হামলা, বেতন নিয়ে আন্দোলন, সর্বশেষ বেতন না পেয়ে কারখানা মালিকের ছেলের ওপর শ্রমিকদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব নিয়ে এ খাতে চরম অস্থিরতা চলছে। এ ছাড়া শিল্পাঞ্চলে নিরাপত্তা সংকট ও শ্রমিক বিক্ষোভ বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ চলমান পরিস্থিতি তাদের আস্থা কমিয়েছে। এরই মধ্যে সময়মতো পণ্য না দিতে পারায় বিভিন্ন দেশ থেকে অর্ডার কমেছে। এই পরিস্থিতিতে এ খাতের ইমেজ পুনরুদ্ধারে শিল্পের নিরাপত্তার পাশাপাশি সরকারের সহযোগিতা চাইছেন ব্যবসায়ীরা।
সম্প্রতি গাজীপুরের মাহমুদ ডেনিমের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক রাফি মাহমুদের ওপর নৃশংস হামলা এবং বিভিন্ন কারখানায় মালিকদের হয়রানি-হুমকিতে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করছে এ খাতে। তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা তৈরি পোশাকশিল্পে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে এ খাত মুখ থুবড়ে পড়বে। অবিলম্বে তৈরি পোশাকশিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় ১১টি ব্যবসায়ী সংগঠন। পাশাপাশি ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি ও সব শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্যও দাবি জানিয়েছে সংগঠনগুলো। সংগঠনগুলো বলেছে, পোশাকশিল্পসহ সার্বিক অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করার জন্য একটি মহল অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। তাদের দ্রুত চিহ্নিত করা জরুরি। আইনের সঠিক প্রয়োগ করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিল্পঘন এলাকায় শ্রমিক আন্দোলন-অসন্তোষ, বিষয়টি শ্রমিকদের নয়। এটা রপ্তানি আয়ের ৮৪ ভাগ নেতৃত দেওয়া পোশাক খাতকে ধ্বংসের আন্দোলন। শ্রমিকের সব দাবি মেনে নেওয়ার পরও তাদের আন্দোলন চলমান থাকায় বোঝা যায় এর পেছনে কলকাটি নাড়ছে তৃতীয় পক্ষ।
এদিকে গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে কারখানার কর্মকর্তাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকালও ইসলাম গার্মেন্টস লিমিটেডের ওয়েভিং ইউনিট, টেক্সটাইল ডিভিশন, নিটওয়্যার ডিভিশন, নিট ডিজাইন বন্ধ রয়েছে। গতকাল বিজিএমইএর তথ্যানুসারে- গাজীপুর, ময়মনসিংহ এলাকায় ৮টি কারখানা বন্ধ রয়েছে। একেক সময় একেক অঞ্চলে সমস্যা লেগেই আছে।
বাংলাদেশ নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গত শুক্রবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রহরা (এসকর্ট) দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল এক ব্যবসায়ীকে। গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে বীভৎসভাবে মারা শুরু করে শ্রমিক নামধারী কিছু দুষ্কৃতকারী। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন অবস্থায় কীভাবে ব্যবসা চলবে? হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে দেশের রপ্তানির প্রধান খাত পোশাকশিল্পকে সুরক্ষার জন্য সরকারের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যাক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি মো. শাহরিয়ার বলেন, একজন ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে আমি ও আমার ব্যবসায়ীদের মানসিক নিরাপত্তা চাই। ব্যবসায়ীরা যদি মানসিকভাবে ভারসাম্য হারিয়ে ট্রমাটাইজ হয়ে যায় তাহলে দেশের অর্থনীতি কোমায় চলে যাবে। এ ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হলে স্থানীয় মানুষ, শ্রমিক, স্থানীয় ঝুট ব্যবসায়ী, প্রশাসন, ব্যাংক ও সরকারের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এগিয়ে যেতে হবে। এ ব্যবসার ক্ষতি হলে তো দেশের ক্ষতি হবে।