মেগা প্রকল্পে মেগা জট

সিলেটের উন্নয়নে বিগত সরকারের আমলে নেওয়া হয়েছিল কয়েকটি মেগা উন্নয়ন প্রকল্প। এসব প্রকল্পে আমূল পাল্টে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন সিলেটবাসী। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও অগ্রগতি নেই স্বপ্নের প্রকল্পগুলোর। বরং মেগা প্রকল্পগুলো নিয়ে দেখা দিয়েছে ‘মেগা জট’। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চার বছরে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কাজ হয়েছে মাত্র ২২ ভাগ। নকশার ত্রুটির অজুহাতে প্রায় দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে প্রকল্পের কাজ। ছয় বছরে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ককে ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ হয়েছে মাত্র ১১ ভাগ। আর সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ দৃশ্যমানই হয়নি। ফলে মেগা প্রকল্পগুলো নিয়ে রীতিমতো আশাহত সিলেটের মানুষ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান ড. এ কে আবদুল মোমেন। তাঁর বড় ভাই আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার সময় থেকে তিনি ওসমানী বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ ও সিলেট-ঢাকা মহাসড়ককে ছয় লেনে উন্নীতকরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। দুটি প্রকল্পের জন্য তিনি আবুল মাল মুহিতকেও উদ্বুদ্ধ করেন। মুহিতের সময়ে শুরু না হলেও মোমেন এসে প্রকল্প দুটির কাজে হাত দেন। ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর ওসমানী বিমানবন্দর সম্প্রসারণ মেগা প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। প্রায় ২২০০ কোটি টাকার এ প্রকল্পের আওতায় দ্বিতলবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবন, ৬টি বোর্ডিং ব্রিজ, কনভেয়ার বেল্টসহ ৩৬টি চেক ইন কাউন্টার, ২৪টি পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টার, ৬টি এস্কেলেটর, ৯টি লিফট, ৩টি লাগেজ কনভেয়ার বেল্ট, কার্গো ভবন, জেট ফুয়েল ডিপো ও কন্ট্রোল টাওয়ারসহ আনুষঙ্গিক আরও কিছু অবকাঠামো নির্মাণের কথা ছিল। ২০২০ সালের ১ অক্টোবর উদ্বোধন হওয়া প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু ২২ শতাংশ কাজ হওয়ার পর নকশায় ত্রুটির কথা বলে বন্ধ রাখা হয় প্রকল্পের কাজ। প্রায় এক- পঞ্চমাংশ কাজ শেষ হওয়ার পর নকশায় ত্রুটি ধরা পড়ার বিষয়টিকে রহস্যজনক বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। অনেকের দাবি, সময় ক্ষেপণ করে প্রকল্পের বরাদ্দ বাড়ানোর পাঁয়তারা ও সঠিক তদারকির অভাবেই ওসমানী বিমানবন্দরের মেগা প্রকল্পটি আটকে রাখা হয়েছে। সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয়। প্রকল্পের নকশা প্রণয়নের পর ২০২০ সালে এসে ত্রুটি ধরা পড়ে। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে ২০২৬ সালের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু গত চার বছরে কাজ হয়েছে মাত্র ১১ ভাগ। দীর্ঘদিনেও শেষ হয়নি সিলেট অংশের জমি অধিগ্রহণ। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়েও তৈরি হবে জটিলতা। সিলেট-ঢাকা করিডর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এ কে মোহাম্মদ ফজলুল করীম গণমাধ্যমকে জানান, ভূমি অধিগ্রহণ কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের কাজ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ১১ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। ইতোমধ্যে বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো সময় বৃদ্ধি ও ক্ষতিপূরণের জন্য চিঠি দেওয়া শুরু করেছে। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের প্রকল্পটি নিয়েও হতাশা দেখা দিয়েছে। জমি অধিগ্রহণে আটকে আছে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল। কিন্তু এখনো প্রকল্পটির কাজ দৃশ্যমান হয়নি। এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, উন্নয়ন বণ্টনে সিলেট সব সময় পিছিয়ে ছিল। তাই উন্নয়নে সমতা আনতে প্রধান উপদেষ্টাসহ বর্তমান সরকারের উচিত সিলেটকে গুরুত্ব দেওয়া। অতীতে মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে জনপ্রতিনিধি হিসেবে ড. মোমেনের তদারকির অভাব ছিল। যেভাবে দায়িত্ব পালনের কথা ছিল তিনি সেভাবে করেননি। যে কারণে অনেক প্রকল্প সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন হয়নি, উল্টো থমকে গেছে।