রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে ঢুকতেই দেখা মিলল চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা আজমের। গত বৃহস্পতিবার তিনি হাসপাতালটিতে ভর্তি হন। ফ্লোরের যেখানে বিছানা পেতেছেন, তার পাশেই ময়লার ডাস্টবিন। ঠিক তার বিছানার বিপরীতে রোগীদের ব্যবহারের ওয়াশরুম। শুক্রবার কথা হয় আজমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বেড নাই।
এখানেই আছি। চিকিৎসা পাচ্ছি, তাই ডাস্টবিন-ওয়াশরুম নিয়ে সমস্যা নেই। হাসপাতালের মিডল ব্লক দিয়ে ঢুকতে ৩১ নম্বর ওয়ার্ড। ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিছানা পেতেছেন রোগীরা। কথা হয় পাবনার ফরিদপুর থেকে আসা রোগী মোতাহারের সঙ্গে। রমজানে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন। ভেঙেছেন পা। তখন একবার ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন চিকিৎসক। তিন দিন আগে আবার এসেছেন। কিন্তু অপারেশনের তারিখ পাচ্ছেন না, তাই ফ্লোরে বিছানা পেতে অপেক্ষায় আছেন কবে অপারেশন হবে। তিনি জানান, তার পায়ের অপারেশন শিগগিরই না করলে কেটে ফেলতে হতে পারে। কিন্তু ডাক্তারকে বলেও অপারেশনের দিন পাচ্ছেন না। হাসপাতাল থেকে খাবার পেলেও দামি দামি ওষুধ কিনতে হচ্ছে প্রতিদিন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড। ওয়ার্ড পর্যন্ত করিডরে রোগীর বিছানা, সেই বিছানা মাড়িয়ে ঢুকতে হয় ওয়ার্ডে। ওয়ার্ডের ফ্লোরে, বারান্দায়-সবখানে রোগী। শয্যা সংখ্যার চেয়ে ওয়ার্ডটিতে কয়েক গুণ বেশি রোগী। এই ওয়ার্ডে গত বৃহস্পতিবার চিকিৎসা নিতে নাটোর থেকে অসুস্থ ছেলে শাওনকে নিয়ে এসেছেন সেলিম। ছেলেকে নিয়ে নাটোর সদর হাসপাতালে এক সপ্তাহ থাকার পর চিকিৎসকরা শাওনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। হাসপাতালের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভিতরে জায়গা না পেয়ে ছেলেকে নিয়ে চলাচলের পথে করিডরে বিছানা পেতেছেন। উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এই হাসপাতালে শুধু উত্তরাঞ্চল নয়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষও এখানে এসে সেবা নিচ্ছেন। তবে এই হাসপাতালে শয্যার চেয়ে রোগী থাকছে তিনগুণ। রাজশাহীর নওদাপাড়া থেকে চিকিৎসা নিতে আসা খাদিজা খাতুন জানান, বেড না থাকায় মেঝেতে তারা চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোগীর বিছানা মাড়িয়ে বাথরুমে যেতে হয় অন্য রোগী ও স্বজনদের। উপায় না থাকায় এমন পরিবেশে তারা চিকিৎসা নিচ্ছেন।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ১২০০ শয্যার। কিন্তু গড়ে প্রতিদিন আড়াই হাজারের বেশি রোগী ভর্তি থাকেন। আউটডোরে চিকিৎসা নেন আরও ৫ শতাধিক। বিপুল পরিমাণ রোগীর জন্য শয্যা তারা দিতে পারছেন না। ফলে তারা ফ্লোরে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ৬০ ওয়ার্ডের জন্য ৩৩৩ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও ২০ জন কম আছে। নার্স সংকট না থাকলেও সহায়ক কর্মচারীর সংকট হাসপাতালটিতে তীব্র। ফলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ অন্যান্য কাজে সমস্যা হয়।
তিনি আরও জানান, অনেক রোগীকে তারা দামি ওষুধ দিতে পারেন না। কারণ হিসেবে তিনি জানান, বিপুল পরিমাণ রোগীর চাহিদা মাথায় রেখে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয়- এমন কমদামি ওষুধ বেশি কেনা হয়। এ ছাড়া রোগীর আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে দামি ওষুধগুলো সরবরাহ দেওয়া হয়। যাদের কেনার সামর্থ্য আছে, তাদের বাইরে থেকে কিনতে অনুরোধ করা হয়।