দেশের অর্থনীতিতে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ দেখছে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশীয় শিল্পে সুরক্ষার পাশাপাশি গ্রামীণ কর্মসংস্থানে বিশেষ নজর দেওয়ার সুপারিশ করেছে ব্যবসায়ীদের এই শীর্ষ সংগঠনটি। দেশের ব্যবসাবাণিজ্যে আস্থার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকবে বলে মনে করছে এফবিসিসিআই। আসন্ন বাজেট উপলক্ষে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও এফবিসিসিআইর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত পরামর্শক কমিটির সভার কার্যবিবরণীতে অর্থনীতির এই চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশগুলো তুলে ধরা হয়েছে। কার্যবিবরণীটি অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এফবিসিসিআইর প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রপ্তানি বহুমুখীকরণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, উচ্চ সুদের হার ও ব্যাংকিং খাতের সংস্কার, ঋণ পরিশোধের চাপ মুদ্রা ও রাজস্ব নীতির সমন্বয়, জিডিপির অনুপাতে কর আদায় বৃদ্ধি, সর্বস্তরে সুশাসন এবং ব্যবসাবাণিজ্যে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করাই অর্থনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। আসন্ন বাজেটে দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার নির্দেশনা থাকা জরুরি। আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব ও ব্যবসায়ীদের সুপারিশ নিয়ে তৈরি কার্যবিবরণীতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে দেশীয় শিল্পে সুরক্ষা প্রদান, গ্রামীণ পর্যায়ে কর্মসংস্থানে গুরুত্ব দেওয়া; নীতি সহায়তার মাধ্যমে ব্যবসাবাণিজ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা; ভোগ্যপণ্যসহ নিত্যপণ্যের মূল্য ও সরবরাহ স্থিতিশীল রাখা; সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধি এবং যথাযথ করনীতির মাধ্যমে সম্পদের সুষম বণ্টন করে অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করার ওপর বিশেষ নজর দিতে বলেছে এফবিসিসিআই।
একই সঙ্গে পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যাংকঋণের সুদের হার কমিয়ে আনা; অপ্রয়োজনীয় ও অনুৎপাদনশীল প্রকল্প গ্রহণ থেকে বিরত থাকা; দক্ষ জনবল সৃষ্টির মাধ্যমে সম্ভাবনাময় ও নতুন বাজারে জনশক্তি রপ্তানির উদ্যোগ গ্রহণ; রপ্তানি সম্প্রসারণে বৈদেশিক মিশনগুলোকে কার্যকর করা, রাজস্ব আয় বাড়াতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ জোরদার করা; মূলধন সংগ্রহে শুধু ব্যাংকব্যবস্থায় নির্ভর না করে পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া এবং রপ্তানি প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, পরিবহন ও লজিস্টিক খাতে প্রণোদনা বা বিশেষ সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনটি। কার্যবিরণীতে বাংলাদেশ সিএনজি মেশিনারিজ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জাকির হোসেন নয়ন বলেন, বর্তমানে ব্যাংকঋণের সুদের হার ব্যবসাবান্ধব নয়। এটি ৯ শতাংশ থেকে ১৬ শতাংশে উঠে গেছে। উচ্চ সুদের হার মানুষের আয় ও কর্মসংস্থান কমিয়ে দিচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, সুদের হার বেশি থাকায় অনৈতিক বাণিজ্য বেড়ে গেছে। ব্যবসার পরিবেশ স্থিতিশীল করার জন্য ব্যাংকঋণের সুদের হার কমিয়ে আনতে হবে। ব্যবসাবাণিজ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনার ওপর জোর দিয়ে মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অনেকের ব্যাংক হিসাব করনথি তল্লাশি করা হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া ঢালাওভাবে তল্লাশি করে ব্যবসায়ীদের হয়রানি না করার জন্য এনবিআরের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। মোস্তফা কামাল আরও বলেন, ‘অনেক বিনিয়োগকারী অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করেও দুই বছরে গ্যাস ও বিদ্যুৎ-সংযোগ পাচ্ছেন না। যেখানে আমরা বিদেশিদের বিনিয়োগের জন্য ডাকছি, সেখানে নিজের দেশের উদ্যোক্তারা জ্বালানি সংকটে ভুগছেন।’