তথ্য অধিকার নিয়ে রাজধানীতে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, তথ্য অধিকার আইন সফল করতে তথ্য অধিকার কমিশন, মিডিয়া ও নাগরিকদের অংশগ্রহণ একত্রে জরুরি। সবার সমন্বয়েই সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক স্বার্থ রক্ষা হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে তথ্য অধিকার আইনের আওতায় আনা জরুরি। সামনে নির্বাচন। সেখানে রাজনৈতিক দলগুলো অর্থ খরচ করবে। এসব অর্থের উৎস সম্পর্কে জনগণের জানার অধিকার আছে। গতকাল গুলশানের একটি হোটেলে তথ্য অধিকার ফোরাম আয়োজিত আন্তর্জাতিক তথ্য জানার অধিকার দিবস উপলক্ষে ‘তথ্য অধিকার আইন : পরিপ্রেক্ষিত পর্যালোচনা’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে।
তথ্য অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক শাহীন আনামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব (সংযুক্ত) মাহমুদুল হোসাইন খান, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, শ্রম সংস্কার কমিশন প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক দাউদ মিয়া, বাংলাদেশে ইউনেস্কোর অফিস প্রধান সুজান ভাইজ, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, আইসোশ্যালের চেয়ারপারসন অনন্য রায়হান প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মিডিয়া রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এমআরডিআই)-এর নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান।
সোমনারে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তথ্য অধিকার কমিশন এখন মৃত। গত নির্বাচন কমিশন পাতানো নির্বাচন কমিশন হয়েছিল। নির্দলীয় ও সাহসী ব্যক্তিদের এখানে নিয়োগ দেওয়া হবে সেই আশা রাখি। আমি লেগে আছি যাতে এই তথ্য অধিকার আইনটা প্রয়োগ হয়। আদালতে গিয়েছি, এখন পর্যন্ত রায় পাই নাই, জানি না পাব কি না। তথ্য না পেলে ক্ষতিপূরণ ও দ্রুত আপিলের ব্যবস্থা থাকা জরুরি।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারি তথ্য সরকারি কর্মকর্তার নয়, জনগণের সম্পদ। অথচ এখনো গোপনীয়তার সংস্কৃতি পরিবর্তন হয়নি। জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে তথ্য আড়াল করা যাবে না। প্রাইভেট সেক্টর ও রাজনৈতিক দলকেও আইনের আওতায় আনতে হবে।
সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, তথ্য অধিকার আইন আমাদের জীবনের মৌলিক অধিকারগুলোর সঙ্গে জড়িত। হাসপাতালের খাবার না পাওয়া থেকে শ্রমিকের ন্যায্য মুনাফা বঞ্চিত হওয়া, সব ক্ষেত্রেই তথ্য জানার অধিকার নাগরিকের প্রাপ্য।
মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, তথ্য অধিকার আইনের উপস্থিতি সত্ত্বেও বাস্তবায়ন দুর্বল। নাগরিকরা প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারছে না, বিশেষ করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে। সরকারি ও বেসরকারি স্তরে তথ্য সংগ্রহ ও বিতরণের জন্য স্পষ্ট ও সমন্বিত ব্যবস্থা তৈরি করা হোক। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও অন্যান্য সুবিধার তথ্য সর্বজনীনভাবে প্রকাশ করলে দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি পাবে, অনিয়ম কমবে এবং জনগণ তাদের অধিকার সঠিকভাবে বুঝতে পারবে।
অনন্য রায়হান বলেন, ২০০৯ সালে তথ্য অধিকার আইন পাস হলেও দুর্নীতি দমনে প্রত্যাশিত সাফল্য আসেনি। গত দেড় দশকে দুর্নীতি এতটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে যে, নাগরিকরা সেবা পেতে ঘুষকে বাধ্যতামূলক ধরে নিয়েছে, এটাই আমাদের বড় ব্যর্থতা।