১৮ আগস্ট, ২০১৯ ২১:০৮

টাকার নোট ও কয়েনে মানুষের মল-মূত্রের জীবাণু, নিরাপদ থাকার উপায়

অনলাইন ডেস্ক

টাকার নোট ও কয়েনে মানুষের মল-মূত্রের জীবাণু, নিরাপদ থাকার উপায়

টাকার নোট ও কয়েনে মানুষের মল-মূত্র থেকে পাওয়া ই-কোলাই জাতীয় ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু পাওয়া যাচ্ছে। আর এই ব্যাকটেরিয়া হাতে লেগে আমাদের পেটে গিয়ে অসুখ হতে পারে।

মাছ, মাংস আর মুরগির দোকান থেকে সংগ্রহ করা টাকার নোট আর কয়েনে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে গবেষণা করে জানিয়েছেন পরিবেশ বিজ্ঞানের ছাত্রী নিশাত তাসনিম। 
 
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের ছাত্রী তাসনিম প্রায় ৬ মাস ধরে টাকা ও কয়েন নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি খুলনা শহরের বিভিন্ন পর্যায়ের দোকান ও বিভিন্ন পেশার মানুষের কাছ থেকে সংগ্রহ করা টাকা ও কয়েনে এমন ব্যাকটেরিয়া পেয়েছেন যা মানুষের মল-মূত্র থেকে আসে।

তাসনিম বলেছেন, 'ই-কোলাই জাতীয় ব্যাকটেরিয়া মানুষের মলে পাওয়া যায়। এই ব্যাকটেরিয়াই ক্ষতিকর মাত্রায় নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করা টাকা ও কয়েনে পেয়েছি।'

তিনি জানান, এক হাজার মাত্রা পর্যন্ত ব্যাকটেরিয়াকে সহনশীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য মনে করা হলেও ১২টি উৎস থেকে নেয়া কাগজের টাকার নোট ও কয়েনের আরও অনেক বেশি মাত্রায় ব্যাকটেরিয়া পেয়েছেন তারা।

নিশাত তাসনিম বলেন, 'সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া পেয়েছি মাছ, মাংস আর মুরগীর দোকান থেকে সংগ্রহ করা টাকার নোট আর কয়েনে। কেননা এসব জায়গায় বিক্রেতারা যেই হাতে মাছ, মাংস, মুরগি ধরছেন এবং পরিষ্কার করছেন আবার সেই হাতেই টাকা ধরছেন। আবার ক্রেতারাও তাদের সাথেই হাত দিয়ে ধরে নোট বা কয়েন বিনিময় করছেন।

তিনি আরও বলেন, 'আমরা দেখার চেষ্টা করছি যে প্রতিদিন যে এতো টাকা আমরা একে অন্যের সাথে শেয়ার করছি তা কতটা নিরাপদ। কিন্তু এটি করতে গিয়ে পুরনো সব নোট ও কয়েনেই ক্ষতিকর মাত্রায় ই-কোলাই ও ফেকাল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব পেয়েছি আমরা।'

নিশাত তাসনিমের এই গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হারুণ চৌধুরী। খুলনা শহরে ৬ মাস ধরে গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন তারা।

অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হারুণ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, 'এ পরীক্ষায় আমরা যে পেয়েছি তা জনস্বাস্থ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে ভয়াবহ। কারণ সাধারণ ব্যাকটেরিয়া তো আছেই, সাথে পাওয়া গেছে মানুষের মল মূত্র থেকে আসা ব্যাকটেরিয়া, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক।'

তিনি বলেন, টাকা সবার জন্যই জরুরি নিত্যপ্রয়োজনীয় কারণ টাকা ছাড়া সব অচল। কিন্তু অসাবধানতার কারণেই সেই টাকাই মানুষের জন্য বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে। টাকা আমরা যেভাবে ব্যবহার করছি আবার ঠিকমতো হাত না ধুয়েই খাবার খাচ্ছি। রাস্তায় সব এক হাতেই হচ্ছে।

মলমূত্রের ব্যাকটেরিয়া টাকায় এলো কিভাবে?
নিশাত তাসনিম বলছেন- যেখানে মাছ, মাংস ও মুরগী বিক্রি হয় সেই জায়গাগুলো প্রায় সবই নোংরা। আবার টাকা দাতা ও গ্রহীতার পরিচ্ছন্নতার অভাব থেকেও টাকা বা কয়েনে ব্যাকটেরিয়ো আসতে পারে।

অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হারুণ বলছেন, 'কিছু ব্যাকটেরিয়া এমনিতেই হয়। আবার কিছু ব্যাকটেরিয়া মল মূত্রের সাথে থাকে। যেমন ধরুন সুইপার হিসেবে যারা কাজ করেন তারা সরাসরি মলমূত্র নিয়ে কাজ করেন। তাদের কাছেও প্রতিনিয়ত অনেক টাকা বা কয়েন হাতবদল হয়। আবার বাজারে টাকা মাটিতে পড়ে। মূলত এভাবে মলমূত্রের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া চলে আসে নোট বা কয়েনে।'

তিনি বলছেন, পরীক্ষাটি করার জন্য তারা মুরগি, মাছ, মাংস, ফুচকাসহ রাস্তার খাবারের দোকান, রিকশা ও ভ্যান চালকসহ মোট ১২টি উৎস থেকে নোট ও কয়েনের নমুনা সংগ্রহ করেছেন তারা। আবার নোট ও কয়েনের ক্ষেত্রেও বাজারে প্রচলিত সব কয়েন ও নোটের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে খুলনা শহরের নানা জায়গা থেকে।

কিভাবে নিরাপদ থাকা যেতে পারে :
অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হারুণ চৌধুরী বলছেন, নোট বা কয়েন হাতে নেয়ার পর সেই হাত না ধুয়ে খাবার খেলে ব্যাকটেরিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনেকেই ওয়াশরুম থেকে আসার পর ঠিকমতো হাত ধোয়ার অভ্যাস নেই। তারাই আবার টাকা ধরছেন এবং সেই টাকা তাদের কাছ থেকে অন্যদের কাছে যাচ্ছে। এভাবেই ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ছড়াচ্ছে। তাই ঝুঁকি মুক্ত থাকতে চাইলে সচেতনতার বিকল্প নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শামীমা নাসরিন শাহেদ বলেন, যথাযথভাবে হাত না ধুয়ে খাবার খেলে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার কারণে ডায়রিয়াসহ নানা সমস্যা হতে পারে। এমনকি খুব বেশি মাত্রায় ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার কারণে পরিপাকতন্ত্রের আরও নানা ধরণের রোগবালাই হবার আশঙ্কা থেকে যায় বলে জানান তিনি।

গবেষণায় কোন মাত্রায় ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে : 
অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হারুণ চৌধুরী জানান- মাংসের দোকানে সর্বোচ্চ ২৬৭০, মাছ বিক্রেতার কাছে থাকা টাকায় ২৬০০ ও মুরগি বিক্রেতার টাকায় ২৩০০ ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া এবং এর চেয়ে বেশি মাত্রায় ফেকাল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে।

এমনকি ভিক্ষুকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা কয়েনেও এক হাজার মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে।

তিনি আরও বলেন, খুলনায় তারা একই বিষয়ে আবারো পরীক্ষা নিরীক্ষা করবেন এবং এরপর আরও কয়েকটি বড় শহরের নোট ও কয়েনের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি নিয়েও গবেষণার পরিকল্পনা আছে তাদের।

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর