৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭ ২২:০৩

১ জানুয়ারি থেকে আমিরাতে চালু হচ্ছে ভ্যাট আইন

কামরুল হাসান জনি, ইউএই :

১ জানুয়ারি থেকে আমিরাতে চালু হচ্ছে ভ্যাট আইন

প্রতীকী ছবি

নতুন বছরের প্রথম দিন হতেই সংযুক্ত আরব আমিরাতে চালু হতে যাচ্ছে ভ্যাট আইন প্রক্রিয়া।  ১ জানুয়ারি থেকে এই আইন কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে আমিরাত সরকার।  সে হিসেবে আমিরাতে বসবাসকারী নাগরিকদের রবিবার ছিল ভ্যাট বিহীন কেনাকাটার শেষ দিন। 

ভ্যাট আইনকে সামনে রেখে বিভিন্ন হাইফার মার্কেট সহ বড় বড় মল ও শপিং সেন্টার গুলোতে ছিল ২৫% - ৭৫% পর্যন্ত ছাড়। শেষ দিনে ফ্যামিলি কিংবা ব্যাচেলর অনেকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মজুদ করতে ছিলেন ব্যস্ত। অনেকে আবার ভ্যাট শুরুর আগেই কিনে নেন পছন্দের মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটারসহ নানা ইলেক্ট্রনিক পণ্য। ভিড় ছিল স্বর্ণের দোকানেও। 

এছাড়াও বহু প্রতীক্ষিত ভ্যাট আইন নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই প্রবাসীদের মাঝে। বেশির ভাগ প্রবাসীই এখনো পুরোপুরি জ্ঞাত নয় ভ্যাট আইন সম্পর্কে । তবে প্রচার-প্রচারণার কমতি ছিলনা আমিরাতের স্থানীয় পত্র-পত্রিকা ও বিভিন্ন মিডিয়ায়। 

নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে চিকিৎসা সেবা, বিদ্যুৎ বিল, পানি বিল, মোবাইল ফোনের রিসার্চ, রেস্টুরেন্ট বা হোটেলে খেতেও প্রদান করতে হবে শতকার ৫% করে ভ্যাট। এশিয়ান, অ্যারাবিক, চায়না সহ সব ধরণের ফাস্টফুড রেস্টেুরেন্ট গুলোই থাকবে ভ্যাটের আইনের আওতাধীন। পছন্দ অনুযায়ী স্বর্ণ বা হিরা কিনতে হলেও দিতে হবে ভ্যাট। আবার গাড়ির মালিকদেরও থাকবে ভ্যাট প্রদানের বাড়তি চিন্তা। গাড়ির ওয়েল চেঞ্জ, মেরামত করা, এমনকি সার্ভিস সেন্টারে গাড়ি ওয়াশ করার ক্ষেত্রেও ভ্যাট প্রদান করতে হবে ৫% করে। 

তবে টেক্সি, বাস, মেট্রো সহ পাবলিক পরিবহণগুলো থাকবে ভ্যাটের আওতামুক্ত। এটিএম বুথ থেকে অর্থ উত্তোলনেও থাকছে না ভ্যাটের জোরালো প্রয়োগ। তবে ভ্যাট প্রদান প্রক্রিয়া চালুর পর পণ্য-দ্রব্যের উপর বাড়তি মূল্য রাখলে ১ লাখ দিরহাম পর্যন্ত জরিমানা গুণতে হতে পারে খুচরা ব্যবসায়ীদের।

ভ্যাট সংক্রান্ত আলাপে রাস আল খাইমা আল কাজী টাইপিং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, খাদ্য দ্রব্য সহ প্রায় সকল ক্ষেত্রেই ভ্যাট আইন প্রযোজ্য হবে। আমিরাতে বসবাসকারী নাগরিকদের ভিসা প্রসেসিং, বিজনেস লাইসেন্স প্রসেসিং সহ বিভিন্ন বিল পরিশোধের ক্ষেত্রেও ভ্যাট প্রদান করতে হবে । তবে শিক্ষাখাত, ভ্রমণ ও রেমিটেন্স প্রেরণ এগুলো ভ্যাট আইনের আওতামুক্ত থাকবে। 

তিনি বলেন, আমিরাতের মৌলিক চাহিদার উন্নয়ন ও পরিবেশগত উন্নয়নে ভ্যাট প্রদান করা সকলের উচিত। কারণ আমরা এদেশের পরিবেশ ব্যবহার করে ব্যবসা করছি, নানাভাবে এদেশ হতে সুফল ভোগ করছি। 

প্রবাসীরা দেশে রেমিটেন্স প্রেরণের ক্ষেত্রে নতুন ভ্যাট আইন কেমন প্রভাব পড়তে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে আল ফার্দান এক্সচেঞ্জ এর মার্কেটিং এন্ড বিজনেস কোঅর্ডিনেটর সাইফুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিন কে জানান, প্রবাসীদের রেমিটেন্স প্রেরণের ক্ষেত্রে ভ্যাট আইন খুব একটা বেশি প্রভাবিত করবে না। কারণ, যদিও ভ্যাট প্রদান করতে হয়, তা শুধুমাত্র চার্জের উপরই নির্ভর করবে, মূল টাকার উপর নয়। যেমন- দেশে রেমিটেন্স প্রেরণের ক্ষেত্রে ফি যদি ১৫ দিরহাম হয়, তবে এর উপরই ভ্যাট ধরা হবে। সেক্ষেত্রে ১৫ দিরহামের শতকরা হিসাব করলে এতে প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্সে তেমন প্রভাব পড়বে না। 

সব মিলিয়ে নতুন বছরের প্রথম দিন হতে চালু হওয়া আমিরাতের ভ্যাট আইন পদ্ধতির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিয়ে আমিরাতে বসবাসরত বিশ্বের অন্যান্য দেশের নাগরিকদের সঙ্গে বাংলাদেশিরাও সচেতন হবে এমনটা প্রত্যাশা করেন প্রবাসী বিশিষ্টজনরা। 

তারা জানান,  নতুন ভ্যাট আইন সম্পর্কে প্রবাসীদের সচেতন হবার বিকল্প নেই। কারণ ভ্যাট প্রদান প্রক্রিয়া প্রবাসীদের ব্যবসা-বাণিজ্য সহ আমিরাতে বসবাসরত নাগরিকদের জীবন যাত্রায় পরিবর্তন আনবে।

বিডিপ্রতিদিন/ ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭/ ই জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর