দুই জন পুরুষ কিংবা দুই জন নারী মিলেই সন্তান নিতে পারবেন এমন দিন বোধহয় এসেই গেল। ক্যামব্রিজের এক যুগান্তকারী গবেষণায় এমন আভাসই মিলেছে। গবেষকরা দেখিয়েছেন, একই লিঙ্গের দুই প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির চামড়া ব্যবহার করে মানুষের ডিম্বাণু এবং শুক্রাণু তৈরি সম্ভব। এমনটি হলে বন্ধ্যা বা সমকামী দম্পতিরাও মাতৃত্ব বা পিতৃত্বের স্বাদ নিতে পারবেন। তবে সমালোচকরা এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসরায়েলের ওয়াইজম্যান ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির চামড়া থেকে কৃত্রিমভাবে জার্ম সেল বা স্টেম সেল তৈরি করেছেন। এই সেল থেকে শ্রক্রাণু ও ডিম্বাণু তৈরি সম্ভব বলে তাদের দাবি।
তারা বলছেন, এই সেল দিয়ে শরীরের যেকোনো অংশের ক্ষতিগ্রস্ত কোষও মেরামত করা সম্ভব। স্টেম সেলের ধর্ম অনেক প্রকারের কোষ তৈরি করা। এই প্রকল্পের ইসরায়েলি বিশেষজ্ঞ জ্যাকব হানা বলেন, এখন থেকে মাত্র ২ বছরের মধ্যে এই কোষ ব্যবহার করে সন্তান নেওয়া যাবে।
তিনি বলেন, আমি প্রযুক্তি দিয়ে মানুষ তৈরির পক্ষে নই…তবে বিভিন্ন কারণে যারা উর্বরতা হারিয়েছেন তাদের জন্য এটা খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। এরইমধ্যে এটা সমকামী দম্পতিদের মাঝে বিশেষ আগ্রহ জাগিয়েছে। জার্নাল সেলে প্রকাশিত ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, সক্স ১৭ নামের একটি মানব জিন নতুন সেল তৈরির জন্য দায়ী।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আজিম সুরানি সানডে টাইমসকে বলেন, স্টেম সেল তৈরির এই প্রক্রিয়ায় প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি সফল হয়েছে। আমরা বলছি না এতে কোনো মিউটেশন ঘটবে না, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা ঘটবে না।
শুক্রাণু ও ডিম্বাণু তৈরির এই প্রক্রিয়ায় আইনি কিছু বাধা আছে। এগুলো পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞ প্রফেসর অ্যালান পেসি বলেন, শৈশবে ক্যান্সার হয়ে হাজার হাজার মানুষ বন্ধ্যা হয়েছে। তারা মাতৃত্ব বা পিতৃত্বের স্বাদ পাবে ভাবতেই আমি উত্তেজনা বোধ করছি। হিউম্যান জেনেটিক্স অ্যালার্টের পরিচালক ডেভিড কিং জানান, প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ সৃষ্টি নিয়ে উদ্বিগ্ন তিনি।
উল্লখ্য, চার্চের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের বিরোধিতা সত্বেও ২ নারী ও ১ পুরুষের ডিএনএ নিয়ে ‘থ্রি-পার্সনস বেবি’ জন্মদান প্রক্রিয়া সম্প্রতি ব্রিটেনে অনুমোদন পেয়েছে।
এদিকে, ব্রিটেনের এক নারীর মৃত্যুর ৪ বছর পরে জন্ম নিতে যাচ্ছে তার সন্তান! এই সন্তান বড় হয়ে উঠবে মৃত সেই নারীর নিজের মায়ের গর্ভে। কিন্তু মৃত মেয়ের এই শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে আইনি লড়াই লড়ে যাচ্ছেন ৫৯ বছর বয়সের ওই নারী। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর আগে নিজের ডিম্বাশয় সংরক্ষণ করেছিলেন তার মেয়ে।
১৯০৮ সালে রাশিয়ান বিজ্ঞানী ম্যক্সিমভ স্টেম সেল এর ধারণা দেন। ১৯৬০ সালে টরন্টো ইউনিভার্সিটিতে ম্যককুলাচ এবং টিল সর্বপ্রথম ইঁদুরের স্টেম সেল আলাদা করে তা পরীক্ষাগারে কালচার করেন। ১৯৬৮ সালে অস্থিমজ্জার স্টেম সেল প্রতিস্থাপন হয়। ১৯৮১ সালে মার্টিন ইভান্স ইঁদুরের থেকে ‘এম্ব্রাইয়োনিক স্টেম সেল’ তৈরি করেন। ১৯৯৮ সালে জেমস থম্পসন মানুষের ভ্রুনের থেকে স্টেম সেল আহরন করেন। ২০০১ সালে বিজ্ঞানীরা মানুষের ভ্রুনের স্টেম সেল ‘ক্লোন’ করেন। ২০০৭ সালে জাপানী বিজ্ঞানী মানব দেহের কোষ থেকে স্টেম সেল উদ্ভাবনের প্রক্রিয়া আবিস্কার করেন। ২০১০ সালে মানব দেহে স্টেম সেলের পরীক্ষা নিরীক্ষা চালান হয়। ২০১১ সালে ইসরায়েলি বিজ্ঞানী বেন নুন বিপন্ন প্রজাতির স্টেম সেল আলাদা করেন। সূত্র : মেইল অনলাইন
বিডি-প্রতিদিন/ ৯ মার্চ ২০১৫/শরীফ