ভোলার শেষকৃত্যে শ্রাদ্ধ, ঘাটকাজ সেরে উঠেছেন সৌমেন নায়ক। মাথা ন্যাড়া করেছেন। মৃতের আত্মার শান্তিকামনায় বাড়িতে কীর্তনের আসর বসেছে। চারিদিকে শোকের পরিবেশ। কার্ড ছাপিয়ে নিমন্ত্রণ করা হয় সাড়ে তিনশ মানুষকে।
বুধবার নিমন্ত্রিত অতিথিরা এসে দেখলেন, সাদা কাপড়ে ঘেরা মণ্ডপে চেয়ার-টেবিল পাতা। সকলের কাছে গিয়ে জোড়হাত করে সৌমেন বলছেন, ভাল করে খাবেন। ওর আত্মার শান্তি কামনা করবেন। বছর পনেরো তার সঙ্গে কাটিয়ে অসুস্থ হয়ে মারা গেছে ভোলা। বাড়ি ছিল হিঙ্গলগঞ্জের কেওড়াখালি গ্রামে। নিজের আর্থিক সঙ্গতি তেমন না থাকলেও প্রিয় 'ছোট ভাইটিকে' বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন সৌমেন। তিন জন ডাক্তার দেখে গেছে ভোলাকে। শেষ রক্ষা হয়নি। দেহ রেখেছে ভোলা।
সৌমেনের দু'চোখ বেয়ে তখন গড়িয়ে পড়ছে পানির ধারা।
ভোলা ছিল তার নিত্য সঙ্গী। সকালে মুখে করে খবরের কাগজটা গৃহকর্তার কাছে পৌঁছে দেওয়া, ফ্যান চালিয়ে বিছানায় আরামে লম্বা ঘুম, খিদে পেলে পায়ে করে থালা এগিয়ে দেয়া বোঝার উপায় ছিল না ভোলা মানুষ নয়। পনেরো বছর আগে রাস্তার কুকুরটিকে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন সৌমেন। সেই থেকে ভোলা এ বাড়ির পুরোদস্তুর এক জন সদস্য। বাড়ির বাইরে কোথাও গেলে সৌমেন সব সময়ে ভোলাকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন। বলতেন, ও আমার ছোট ভাই। এ হেন ভোলার মৃত্যুতে সৌমেন যে ভেঙে পড়বেন বলাই বাহুল্য। কিন্তু প্রিয় পোষ্যের মৃত্যুতে যে আনুষ্ঠানিকতা দেখালেন সৌমেন, তা এক কথায় নজিরবিহীন।
সৌমেনের কথায়, 'কুকুর যে প্রভুভক্ত জীব, তা সকলেই জানে। কুকুর কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করে না। কিন্তু যে মানুষ কুকুর ভালবাসেন, তারও তো কিছু কর্তব্য আছে। সে জন্যই ভোলার মৃত্যুতে আমার যতটুকু সামর্থ্য, তা-ই করলাম।'
এর আগে তিলক বলে আরও একটি কুকুর ছিল সৌমেন বাবুর। সে মারা যায় বছর দুয়েক আগে। তখন পরিবারের আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ। তাই ইচ্ছে থাকলেও পালৌকিক ক্রিয়া করা হয়ে ওঠেনি সৌমেনের। তাই এ বার ভোলার মৃত্যুতে হাত উপুড় করে খরচ করেছেন।
বাড়ির সামনের জমিতেই কবর দেয়া হয়েছে ভোলাকে। ১৪ দিন রীতিমতো কাছা ধারণ করেছেন সৌমেন ও তার আত্মীয় সৌমিত্র সরকার। হবিষ্যি রেঁধে খেয়েছেন। হিন্দুশাস্ত্র মতে নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুতে যা যা আচার-বিচার পালন করার কথা, সবই করেছেন।
বুধবার প্রায় সাড়ে ৩শ’ লোক পাত পেড়ে খেলেন ভোলার শ্রাদ্ধে। শুক্তো থেকে শুরু করে মুড়িঘণ্ট-মাছ-মাংস-চাটনি-মিষ্টি কিছুই বাদ যায়নি।
সূত্র: আনন্দবাজার
বিডি-প্রতিদিন/১২ মার্চ ২০১৫/ এস আহমেদ