সময়ের সাথে আর প্রযুক্তির উন্নতিতে বদলেছে ভারতের পরগনার গঙ্গাসাগর মেলার করুণ কাহিনী। এখন গঙ্গাসাগর মেলা মানে পরিবারের সঙ্গে একদিন ছুটি কাটাতে যাওয়ার নতুন ঠিকানা। বিগত পঁচিশ বছর ধরে এই মেলায় পুরোহিতের কাজ করেন এলাকার বাসিন্দা দূর্গাগতি পাহাড়ি। দূর্গাগতিবাবু জানান, এক কালে গঙ্গাসাগর মেলায় ছিল সাধু সন্ন্যাসীদের ভিড়। এখন তাদের সংখ্যাই কমে গেছে। তাছাড়া বছর ধরে লোকজন এখানে সপরিবারে বেড়াতে আসেন। মেলার সময় সেই ভিড় আরো বাড়ে।
পুণ্যার্থীদের একাংশ জানান, এককালে এই মেলার সকাল শুরু হত কয় ঘটিকায় স্নান সারতে হবে সেই ঘোষণার মাধ্যমে। এখন আর সেই ঘোষণা নেই। পরিবর্তে কোন শৌচালয় ফাঁকা রয়েছে, কোথায় লম্বা লাইন, বিনামূল্যের শৌচালয় কোথায় সেই ঘোষণা হয়। মেলা প্রাঙ্গণে শৌচালয়ের অভাব ছিল বরাবর। উন্মুক্ত স্থানেই শৌচকর্ম সারতেন বেশির ভাগ মানুষ। কিন্তু এখন প্রশাসনের তৎপরতায় মেলা প্রাঙ্গণ অনেক বেশি ঝা চকচকে। এইসব কিছুই আরো আকর্ষণীয় করে তুলছে গঙ্গাসাগরকে। একটা সময় মেলায় এসে স্বজন হারিয়ে যাওয়া ছিল এক চেনা ছবি। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা সেই হিসাবও বদলে দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে গঙ্গাসাগরের মেলায় হারিয়ে যাওয়া মানুষদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
দেশটির এক পুলিশ কর্তা জানান, আগে গঙ্গাসাগরে ডিউটি মানে মকর সংক্রান্তির দিন কড়া পাহারা। কিন্তু এখন তো মেলা শুরুর দিন থেকেই লোক আসতে শুরু করেন। আগে অনেক বেশি মানুষ এখানে রাত কাটাতেন। এখন অবশ্য রাতে ঘাট ফাঁকাই থাকে। তবু নজরদারি চলে। বিবর্তন শুধু রাস্তাঘাট কিংবা যোগাযোগের মাধ্যমে ঘটেনি। বদলেছে মন্দির। পুজা দেওয়ার ধরনও। আগে বেশিরভাগ মানুষ নারকেল আর কলা দিয়ে পুজা দিতেন। কিন্তু এখন ডালার দোকান হয়েছে। দেদার বিক্রি হচ্ছে ডালা। মেলার সময় মন্দিরের চারপাশে বহু স্থানীয় মানুষ ফুলের দোকান দিতেন। এখন অবশ্য ইচ্ছে হলেই বাসিন্দারা যেখানে-সেখানে দোকান দিতে পারেন না। সরকারের পক্ষ থেকে ডালা-অর্কিডের দোকানিদের জন্য পাকা ঘর বানানো হয়েছে। তবে এই বদলে খুশি নন গঙ্গাসাগরে আসা সন্ন্যাসীরা। তাদের একাংশ মনে করছেন, তীর্থক্ষেত্রে যাতায়াতের পথ এত মসৃণ হয়ে গেলে তার মাহাত্ম্য কমে যায়। সূত্র: আনন্দবাজার।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার