১ অক্টোবর, ২০২০ ০৫:৫২

বদলে যাচ্ছে নদী

অনলাইন ডেস্ক

বদলে যাচ্ছে নদী

ইউরোপে ২০১৮ সালের গ্রীষ্মে তাপদাহ এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, খরস্রোতা রাইন নদীর পানি শুকিয়ে খালের আকার ধারণ করে

কেবল খাবার পানি নয়, অন্য নানা কাজেই নদীর ওপর নির্ভর করতে হয় বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে। কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ এই পানি সরবরাহের প্রাকৃতিক ব্যবস্থাকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দিচ্ছে। 

বিশ্বের মোট পানির বেশিরভাগই রয়েছে সমুদ্রে। মোট পানির কেবল ১০০ ভাগের এক ভাগ নদী দিয়ে বয়ে যায়। কিন্তু এই নদীগুলো ছাড়া ভূপৃষ্ঠে মিষ্টি পানি অন্যসব উৎস, যেমন হ্রদ ও জলাভূমি শুকিয়ে যাবে। এরই মধ্যে এমন আলামত দেখা যেতে শুরু করেছে। কেবল মানবজাতি নয়, প্রাণিজগত ও উদ্ভিদজগতেও পড়ছে এর প্রভাব।
 
আফ্রিকার শাড হ্রদের ১৯৬৩, ১৯৭৩, ১৯৮৭ এবং ১৯৯৭ সালের তুলনা করলে দেখা যায়, মাত্র ৬০ বছরে হ্রদটির আকার ২৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার থেকে কমে দুই হাজার বর্গ কিলোমিটারেরও নিচে নেমে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে এর জন্য বাঁধ ও সেচব্যবস্থাকে দায়ী করা হয়েছে। কিন্তু গবেষকরা জানতে পেরেছেন, এই অঞ্চলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নদী কোমাদুগুর পানিও ধীরে ধীরে তাপমাত্রার ওঠানামার কারণে কমে এসেছে। 

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষ কীভাবে বাধ্য হচ্ছে খাদ্য ও পানির নতুন উৎস খুঁজে নিতে, শাড হ্রদ তার অন্যতম উদাহরণ। কৃষক এবং পশু খামারের মালিকেরা পানির জন্য ধীরে ধীরে উর্বর জমির সন্ধানে যাচ্ছেন। কিন্তু উর্বর জমি কমে যাওয়ায় অঞ্চলটিতে জমি নিয়ে উত্তেজনাও দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন মহাদেশেও অত্যধিক গরমে নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়া এবং মাছ মরে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে।

ইউরোপে ২০১৮ সালের গ্রীষ্মে তাপদাহ এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, খরস্রোতা রাইন নদীর পানি শুকিয়ে খালের আকার ধারণ করে। তাপমাত্রা একসময় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসও ছাড়িয়ে যায়। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ মালামাল পরিবহনে রাইন নদীর ওপর নির্ভর করে। কিন্তু একপর্যায়ে প্রশস্ত এ নদী এতটাই অগভীর হয়ে পড়ে যে, কেবল একটি লেন চলাচলের জন্য চালু রাখা সম্ভব হয়।

পানীয় জলের নির্ভরযোগ্য উৎসগুলোও হুমকির মুখে। বিভিন্ন পর্বতমালায় জমে থাকা হিমবাহকে পানির আধার মনে করা হয়। শীতকালে প্রচুর পানি বরফ আকারে জমিয়ে রাখে হিমবাহগুলো। গ্রীষ্মকালে সে বরফ গলেই বিভিন্ন নদীতে পানি যায়। হিমবাহগুলো অন্তত ২০০ কোটি মানুষের পানি সরবরাহ করে। কিন্তু এরই মধ্যে বিভিন্ন হিমবাহে বরফ কমতে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এ শতাব্দীর শেষের দিকে হিমালয়ের তিন ভাগের এক ভাগ বরফ একেবারে গলে যাবে।

সিন্ধু অববাহিকার কৃষকেরা বিভিন্ন শস্য চাষের জন্য হিমালয়ের বরফ গলা পানির ওপর নির্ভর করেন। পুরো অঞ্চলটি সুপেয় পানি ছাড়াও সেচ, মাছ ও পরিবহনের জন্য অনেকাংশেই নির্ভর করে সিন্ধু, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার ওপর। এই তিন অববাহিকা দক্ষিণ এশিয়ার অন্তত ১৩ কোটি কৃষক ও ৯০ কোটি বাসিন্দার পানির জোগান দেয়।

অস্ট্রেলিয়ার দাবানলের মতো সম্প্রতি অনেক ভয়াবহ দাবানল দেখেছে বিশ্ব। জলবায়ু পরিবর্তনের আরেক দিক এটি। দাবানল নদীরও ক্ষতি করছে। অস্ট্রেলিয়ার দাবানলে গাছ পুড়ে ছাই পড়ছে মারে-ডার্লিং অববাহিকার নদীতে। এর ফলে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। এতে কেবল নদীর পানির ওপর নির্ভরশীল ২৬ লাখ মানুষ নয়, অনেক প্রজাতির প্রাণীও পড়েছে হুমকির মুখে।

কেবল দাবানলের ছাই-ই যে নদীর ক্ষতি করে, এমনও না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অতিবৃষ্টির ফলে নানা কারখানার বর্জ্য আরও দ্রুত নদী হয়ে সাগরে গিয়ে পড়ছে। এর ফলে নিউইয়র্ক উপকূলের মতো বিশাল এলাকাজুড়ে শ্যাওলা জন্মে সেখানকার জীববৈচিত্র্যে প্রভাব ফেলছে। কোনো কোনো স্থানে অক্সিজেনের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ডেড জোনের সৃষ্টি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া মিসিসিপি নদীতে নাইট্রোজেন দূষণ একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। অতিবৃষ্টির ফলে আরও বেশি বর্জ্য ও নাইট্রোজেন জমা হচ্ছে নদীর পানিতে। একই সঙ্গে বন্যা ও সংখ্যায় ক্রমশ বাড়তে থাকা হারিকেনও ফেলছে প্রভাব।

সূত্র: ডয়চে ভেলে

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর