চীনের আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, ২০২৪ সাল ছিল দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ বছর। ১৯৬১ সালে পূর্ণাঙ্গ তাপমাত্রা রেকর্ড শুরু হওয়ার পর থেকে এটাই ছিল সর্বোচ্চ। ২০২৪ সালের গড় জাতীয় তাপমাত্রা ছিল ১০.৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ১.০৩ ডিগ্রি বেশি।
চীনা আবহাওয়া প্রশাসন বুধবার রাতে এক প্রতিবেদনে জানায়, ১৯৬১ সাল থেকে শুরু হওয়া রেকর্ড অনুযায়ী উষ্ণতম চারটি বছর ছিল গত চার বছর। আর উষ্ণতম দশটি বছরের সবগুলোই ঘটেছে ২১শ শতকে।
দেশটির অর্থনৈতিক কেন্দ্র সাংহাই শহরেও ২০২৪ সালে রেকর্ড করা হয়েছে সবচেয়ে উষ্ণ বছর। শহরের গড় তাপমাত্রা ছিল ১৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ১৮৭৩ সাল থেকে শুরু হওয়া রেকর্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়া গুয়াংঝু শহরে ২০২৪ সালে দীর্ঘতম গ্রীষ্মের অভিজ্ঞতা হয়েছে। ২৪০ দিন ধরে সেখানে গড় তাপমাত্রা ছিল ২২ ডিগ্রির ওপরে, যা ১৯৯৪ সালের ২৩৪ দিনের রেকর্ড ভেঙেছে।
উষ্ণ আবহাওয়া ও দুর্যোগের প্রকোপ
উষ্ণ আবহাওয়ার পাশাপাশি চীনে শক্তিশালী ঝড় ও ভারী বৃষ্টির মতো দুর্যোগও বেড়েছে। গত বছর বন্যায় বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষকে ঘরছাড়া হতে হয়েছে। দক্ষিণ চীনের একটি মহাসড়ক টানা বৃষ্টির পর ধসে পড়লে মে মাসে ৪৮ জন নিহত হয়। অন্যদিকে, সিচুয়ান, চংকিং এবং ইয়াংজি নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে গ্রীষ্মের শেষদিকে তীব্র গরম ও খরার মুখোমুখি হতে হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চীনে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি তীব্র ঝড়বৃষ্টি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা বাড়ছে। গ্রীনপিস জানিয়েছে, চীনে চরম গরমের দিনগুলো আরও আগেভাগে আসছে এবং এই তাপের প্রভাবিত এলাকার আকার বাড়ছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, ২০২৪ সাল ছিল বৈশ্বিকভাবে রেকর্ড করা উষ্ণতম বছর। এই উষ্ণতা শুধু তাপমাত্রা বৃদ্ধির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বায়ুমণ্ডল এবং সাগরের অতিরিক্ত তাপে প্রভাবিত আবহাওয়াজনিত দুর্যোগও বাড়ছে। জুরিখভিত্তিক বিমা সংস্থা সুইস রি-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে জলবায়ু-সম্পর্কিত প্রাকৃতিক দুর্যোগে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩১০ বিলিয়ন ডলার।
উষ্ণ আবহাওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাব চীনের জনগণের জীবন ও জীবিকায় উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল