গুপ্তচরবৃত্তি সব সময়ই রহস্যময় এবং চমকপ্রদ। যদিও অধিকাংশ গুপ্তচরের মৃত্যু জনসাধারণের কাছে অপরিচিত থেকে যায়, তবে কখনও কখনও এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
২০১৯ সালে নরওয়ের উপকূলে ধরা পড়া রাশিয়ান স্পাই তিমি 'হভালডিমির' এমনই একটি ঘটনা। ২০২৫ সালে তিমিটির মৃত্যুর খবর পুনরায় আলোচনায় নিয়ে আসে প্রাণীদের গুপ্তচরবৃত্তিতে ব্যবহারের বিষয়টি। এই তিমি শুধু নয়, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেঙে যাওয়া পর্যন্ত সামুদ্রিক প্রাণীদের গুপ্তচর এবং হত্যাকারী হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রকল্প চালু ছিল।
প্রাণী এবং প্রযুক্তির গুপ্তচরবৃত্তি
১৯৬০ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রাণীকে গুপ্তচর হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রকল্প চালু করেছিল। সিআইএ-র ‘অক্যাস্টিক কিটি’ প্রকল্পে বিড়ালের শরীরে মাইক্রোফোন বসিয়ে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করা হয়। তবে প্রথম পরীক্ষাতেই বিড়ালটি একটি ট্যাক্সির নিচে পড়ে মারা গেলে প্রকল্পটি বাতিল করা হয়।
অন্যদিকে, গুপ্তচর কবুতরের সফলতা উল্লেখযোগ্য। ছোট ক্যামেরা লাগানো এই কবুতরগুলো নিষিদ্ধ এলাকায় প্রবেশ করে ছবি তুলতে পারত। এদের অসাধারণ দিকনির্ণয় ক্ষমতার কারণে এরা নিরাপদে ফিরে আসত। পরবর্তী সময়ে প্রযুক্তির অগ্রগতির মাধ্যমে প্রাণীদের বদলে ড্রোনের মতো যন্ত্র ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৭০-এর দশকে সিআইএ-র তৈরি 'ইনসেকটোথপ্টার' বা পোকামাকড়ের মতো ড্রোন এবং 'অ্যাকুইলিন' প্রকল্প গুপ্তচরবৃত্তির ভবিষ্যৎ দিকটি স্পষ্ট করে।
বিস্ফোরক ইঁদুর থেকে কৃত্রিম পাথর
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশরা বিস্ফোরক ভরা মৃত ইঁদুর জার্মান কারখানার বয়লার রুমে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। যদিও জার্মানরা প্রথম চালানই আটকায়, তবে এই পরিকল্পনার উদ্ভাবনী শক্তি তাদের মধ্যে এমন ভয় তৈরি করে যা প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যকেও ছাড়িয়ে যায়। একইভাবে, ২০০৬ সালে মস্কোতে ব্রিটিশ গুপ্তচর সংস্থা এমআই৬ একটি কৃত্রিম পাথরের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করতে চেয়েছিল। তবে রাশিয়ান গোয়েন্দারা বিষয়টি ধরে ফেললে এটি ব্রিটিশ সরকারের জন্য বিশাল অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সাহসী বুদ্ধির উদাহরণ
গুপ্তচরবৃত্তি কেবল প্রযুক্তি নয়, তাৎক্ষণিক বুদ্ধি এবং সাহসী পদক্ষেপেরও উদাহরণ। ১৯৮৫ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে পশ্চিমা ডাবল এজেন্ট ওলেগ গর্ডিয়েভস্কিকে বের করে আনতে ব্রিটিশ কূটনীতিকরা অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়েছিল। একটি চেকপয়েন্টে কুকুর সন্দেহ করায় কূটনীতিকরা কুকুরটিকে চিপস খাইয়ে বিভ্রান্ত করে। অন্য একটি স্থানে একজন কূটনীতিকের স্ত্রী শিশুর ডায়াপার পরিবর্তন করে সেটি কুকুরের কাছে রেখে কুকুরটিকে আরেকবার বিভ্রান্ত করেন।
প্রাণী, প্রযুক্তি এবং তাৎক্ষণিক বুদ্ধি—গুপ্তচরবৃত্তি সব সময়ই নতুন পথের সন্ধান দেয়। গবেষণায় বড় বাজেট থাকলেও, কখনও কখনও সাহসী পদক্ষেপ এবং চটপটে সিদ্ধান্তই হয়ে ওঠে সাফল্যের মূলমন্ত্র। সূত্র : এনডিটিভি
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল