বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

পোশাক খাত অস্থিরতায় কিছু ব্যাংকেরও দায় রয়েছে

মুহম্মদ আলী এমডি ও সিইও, (ইউসিবি)

পোশাক খাত অস্থিরতায় কিছু ব্যাংকেরও দায় রয়েছে

নানা ধরনের সংকট আর খেলাপি ঋণের চাপে যেখানে ব্যাংকিং খাত নিয়ে বিভিন্ন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করছে, সেই সময় দেশের প্রথম প্রজন্মের ব্যাংক ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সম্প্রতি গ্লোবাল ফিন্যান্সের জরিপে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের সেরা ৩০টি ইমার্জিং মার্কেটস ব্যাংকের তালিকায় ওঠে এসেছে ইউসিবির নাম। ইউসিবিকে শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকে পরিণত করার অন্যতম প্রধান রূপকার মুহম্মদ আলী। এরই স্বীকৃতিস্বরূপ সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে ওয়ার্ল্ড ব্র্যান্ড কংগ্রেসে 'সিইও অব দ্য ইয়ার' সম্মাননা পেয়েছেন ৩৬ বছরের অভিজ্ঞ এই ব্যাংকার। এ ছাড়া ইউসিবির মোবাইল আর্থিক পরিসেবা ইউক্যাশ 'ইফেক্টিভ ইউজ অব মার্কেটিং কমিউনিকেশন্স' বিভাগে পুরস্কৃত হয়।

ব্যাংকের সফলতা নিয়ে নানা বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে কথা বলেছেন ইউসিবি ব্যাংকের এমডি ও সিইও মুহম্মদ আলী। তিনি বলেন, রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা এবং অন্যান্য অস্থিরতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশের স্বনির্ভর অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ক্রমেই বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে শিল্পায়ন অভিমুখে এগিয়ে যাচ্ছে। এ যাত্রায় মুখ্য ভূমিকা পালন করছে পোশাক খাত। তৈরি পোশাক খাতের আজকের এই শক্তিশালী অবস্থানের পেছনে ব্যাংকিং খাতের সহযোগিতা ও অভ্যন্তরীণ সহায়ক আর্থিক নীতিমালা ভূমিকা পালন করেছে।

মুহম্মদ আলী বলেন, সম্প্রতি তৈরি পোশাক খাতে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে তার পেছনে কিছু ব্যাংকেরও পরোক্ষ দায় রয়েছে। কিন্তু ইউসিবি তৈরি পোশাক খাতে অর্থায়নে প্রথম থেকেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ইউসিবি। ইউসিবি এসএমইতে জোর দিয়ে অনেকটা সফল হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাতে হয়। তিনি যে মুদ্রানীতি দিয়েছেন কিংবা গত কয়েক বছরে যে মুদ্রাভঙ্গি গ্রহণ করেছেন সেই কারণে দেশের ক্ষুদ্রশিল্পের বিকাশ ঘটছে। এর ইতিবাচক প্রভাব আমাদের সার্বিক অর্থনীতিতে পড়েছে। ফলে প্রবৃদ্ধি অর্জন বাংলাদেশের জন্য খুবই সহজ হবে বলে আমি মনে করি। ইউসিবি ব্যাংকের এমডি বলেন, দেশে বড় ইন্ডাস্ট্রির সুযোগ অবকাঠামোগত কারণে এখন কম। কিন্তু ছোট ইন্ডাস্ট্রির সুযোগ রয়েছে। আমরা দেখেছি এসএমই ক্লায়েন্টরা মহাজনের কাছে অতিরিক্ত সুদে ঋণ নেয়। সে জায়গায় আমরা তাদের কম সুদে ঋণ দিয়েছি। এতে দেশে এসএমই বিনিয়োগ যেমন বেড়েছে, তেমনি ব্যাংকের অবস্থানও শক্তিশালী হয়েছে।

তিনি বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিক সাফল্য ধরে রেখেছে ইউসিবি। বৈদেশিক বাণিজ্য, ঋণ বিতরণ, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাসহ নানা খাতে ভালো করেছে ইউসিবি। ২০১৩ সালে ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ ১৭ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। আমানত ৯ শতাংশ বেড়ে এ বছর দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা। ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ২৩২ কোটি টাকা, যা ১৫ শতাংশ বেড়ে জুন ২০১৪ পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। চলতি বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) ৪২৩ কোটি টাকা মুনাফা করেছে ইউসিবি। গত বছরের একই সময় যা ছিল ২৯০ কোটি টাকা। সে হিসাবে ব্যাংকটির মুনাফা বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। মুহম্মদ আলী বলেন, দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী এখনো ব্যাংকিং সেবার বাইরে। এসব ব্যাংকবহিভর্ূত মানুষকে আর্থিক সেবার আওতায় আনতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কোনো বিকল্প নেই। মানুষকে ব্যাংকিং সেবার মধ্যে না আনতে পারলে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন যেমন সম্ভব হবে না তেমনি অর্থপ্রবাহও সেভাবে বাড়বে না। সে জন্য ইউক্যাশ নিয়ে আমরা ব্যাপকভাবে মাঠে নেমেছি। বেসরকারি ব্যাংকগুলো যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে বাংলাদেশের সব মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে আর খুব বেশি সময় লাগবে না। তিনি বলেন, ইউসিবি শুধু দেশের মধ্যে সীমিত না থেকে বিদেশেও যাবে। ইউসিবির আধুনিক ব্যাংকিং সেবা আমরা প্রবাসী গ্রাহকদের মধ্যেও সম্প্রসারিত করতে চাই। প্রথমত হংকংয়ে আমরা একটি বিশেষ শাখা খুলব, সেখান থেকে ব্যবসায়ী এবং প্রবাসীরা উপকৃত হবে। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়াতে বিভিন্ন দেশে গিয়ে সভা করেছি, প্রবাসীদের বুঝিয়েছি।

 

 

সর্বশেষ খবর