পাবনার পুষ্পপাড়ায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত আরও একজন আজ রবিবার সকাল ৬টার দিকে মারা গেছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা আনার পথে সিরাজগঞ্জ কড্ডার মোড় নামক স্থানে রফিকুল ইসলাম (২৫) মারা যান।
নিহত রফিকুল সদর উপজেলার ধর্ম গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল চার জনে।
এর আগে পাবনা সদর উপজেলার পুষ্পপাড়া বাজারে গতকাল শনিবার রাত ৮টার দিকে দুর্বৃত্তদের গুলিতে আওয়ামী লীগের তিন কর্মী নিহত হন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন: ধর্মগ্রামের সিরাজুল ইসলাম সিরাইয়ের ছেলে রফিক, একই গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে সুলতান মাহমুদ, আব্দুল মজিদের ছেলে ফজলুর রহমান ফজলু, পার্শ্ববর্তী পীরগাছা গ্রামের আফসার আলীর ছেলে আব্দুস সালাম। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন আরও চারজন। আহতদের একজন ছিলেন রফিকুল ইসলাম।
এদিকে, পাল্টা আক্রমণের আশঙ্কায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। নিহত ব্যক্তিদের নিজেদের কর্মী দাবি করে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগ গতকাল রাতেই পাবনা শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।
অপরদিকে, আজ রবিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে এলাকাবাসী ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে।
আতাইকুলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকরাম আলী জানান, গতকাল রাত সোয়া ৮টার দিকে হতাহতরা পুষ্পপাড়া বাজারে চায়ের দোকানে বসেছিলেন। এ সময় একদল মুখোশধারী সন্ত্রাসী এসে অতর্কিত তাদের ওপর হামলা চালায়। তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও এলোপাতাড়ি গুলি করে পালিয়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থলেই সুলতান, ফজলু ও সালাম মারা যায়। গুলিবদ্ধি ধর্মগ্রামের রফিকুল ইসলাম ও মামুন হোসেনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের অবস্থার অবনতি হলে রাতেই অন্যত্র স্থানান্তরের কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। এদের মধ্যে রফিককে ঢাকায় আনার সময় পথিমধ্যে তিনি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানান, নিহত ৩ ব্যক্তি প্রকাশ্যে এলাকায় আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে চলাফেরা করলেও তারা মূলত কথিত চরমপন্থী সংগঠন বাহিনীর আঞ্চলিক নেতা ছিলেন। তারা এলাকায় চাঁদাবাজী, খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, রাহাজানির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাদের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ ছিল। এদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পেতেন না।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র দাবি করেন, ওই এলাকায় সম্প্রতি চাঁদাবাজীর ১৬ লাখ টাকা নিহত সুলতান মাহমুদের কাছে গচ্ছিত ছিল। এই টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে নিজের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। সুলতান টাকার বিষয়টি অস্বীকার করায় বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। ওই টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়েই এই খুনের ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া নিহতদের দলীয় পরিচয় নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা তাদের চরমপন্থী সন্ত্রাসী বাহিনী বললেও এ ঘটনার প্রতিবাদে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগ নিজেদের কর্মী দাবি করে গতকাল শনিবার রাতে শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে এবং এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স জানান, ফজলুর রহমান ও আব্দুস সালাম যুবলীগ কর্মী ও সুলতান মাহমুদ আওয়ামী লীগ কর্মী। তিনি এ ঘটনার জন্য বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী বাহিনীকে দায়ী করেন।