রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চিয়তার কারণে গত এক দশক ধরে জিডিপিতে যে এক শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সেটি আর ধরে রাখা যাবে না। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এই অভিমত দিয়েছে । একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভাবে সামগ্রিক অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে পারে।
রবিবার দুপুরে মহাখালীর ব্র্যাক-ইন সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলেন ২০১৩-১৪ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকের অন্তবর্তী্কালীন গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান গবেষণা প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে অর্থনীতি বড় ধাক্কার সম্মুখীন হয়। এই সময় দেশে উৎপাদন ও সেবামূলক বিভিন্ন কর্মকান্ড বাধাগ্রস্ত হয় । ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি, যা বিনিয়োগের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি।
তিনি বলেন, তুলনামূলক সামষ্টিক অর্থনীতিতে কিছূটা স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। যেমন মূল্যস্ফিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ভালো অবস্থানে আছে, রেমিটেন্স প্রবাহ ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে । কিন্তু অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির মূল বিষয়গুলির পরিস্থিতি খারাপ। এর মধ্যে সঞ্চয় কমছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রিতা আরো বাড়ছে, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কমছে, এই খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ হচ্ছে না, উন্নয়ন বহির্ভত ব্যয় বাড়ছে। ফলে আমরা এক ধরনের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা দেখছি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের পরে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে ফিরে গেছে কিন্তু স্পষ্ট ধারনার ভিত্তিতে বিনিয়োগ করতে পারছে না। কারণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি। বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের সুযোগ তৈরি হচ্ছে । আর্ন্তজাতিক বাজার বাড়ছে। এই সুযোগ কাজে লাগানো দরকার। অবকাঠামো এখন বাংলাদেশের জন্য্ মুল্য সমস্যা । ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যআয়ের দেশ হতে হলে প্রবৃদ্ধি হতে হবে ৮ থেকে ১০ শতাংশ।
তিনি বলেন, পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে । আমরা বলছি আরো কম হবে। তবে এটা হলেও বাজেটে প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কম হবে।
জ্বালানি খাত নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্যুতের প্রকৃত উৎপাদনের সঙ্গে সক্ষমতার বড় পার্থক্য হচ্ছে । সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি উৎপাদন না করতে পারলে ভোক্তার উপর তার অভিঘাত এসে পড়ে। কোন মূল্যে বিদুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। ২০১০ সালে কুইকরেন্টাল আসলেও তিন বছরের মধ্যে তা অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন ২০১৮ পর্যন্ত টেনে নেওয়া হয়েছে। যাদের সময় বাড়ানো হচ্ছে তাদের সঙ্গে কী মূল্য পুনঃনির্ধারণ করা হচ্ছে? ইতোমধ্যে বিনিয়োগকারীদের স্থায়ী খরচ উঠে গেছে। সেই কারণে মূল্য কম হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা হচ্ছে না্। এডিপির মধ্যে জ্বালানি খাতে ১৪টি প্রকল্প ছিল এর মধ্যে ২টি বাস্তবায়িত হচ্ছে । এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে বিদ্যুতের দাম আরও কমতো।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, তৌফিক ইসলাম খান, অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ।