বর্তমানে সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় যারা পুলিশ সুপারের (এসপি) দায়িত্ব পালন করছেন তাদের বেশির ভাগের বিসিএস ২০তম ব্যাচের পুলিশ কর্মকর্তা। ১৯, ১৮ ও ১৭ ব্যাচের সিনিয়র কর্মকর্তাদের পোস্টিং দেওয়া হয়েছে ডাম্পিং স্টেশন হিসেবে পরিচিত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার বা পুলিশের বিশেষ শাখা এসপির মতো বিভিন্ন স্থানে। এতে পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। কিন্তু পুলিশ একটি শৃঙ্খলা বাহিনী হওয়ায় এ ব্যাপারে কেউ প্রকাশ্যে কথা বলতে চান না।
ডিআইজি পদমর্যাদার কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, অতীতে জেলা পর্যায়ে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পোস্টিংয়ের সময় অনেক বিষয় বিবেচনা করা হতো। এর মধ্যে ওই কর্মকর্তার অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, সততা ও সাহসিকতার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হতো। বিশেষ করে বড় বড় জেলার গুরুত্ব বিবেচনা করে সেখানে সিনিয়র কর্মকর্তাদের পোস্টিং দেওয়া হতো। কোনো কারণে জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে তারা অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামালে সক্ষম হতেন। এখন কিন্তু তেমনটা হচ্ছে না। এখন বিবেচ্য বিষয় একটি ওই কর্মকর্তার রাজনৈতিক পরিচয় কি। নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের দক্ষতার অভাবে কোনো কোনো জেলায় বিশৃঙ্খলাকারীদের সঙ্গে পুলিশের ঘণ্টার পর ঘণ্টা সংঘর্ষ হচ্ছে। কোথাও কোথাও সপ্তাহ ধরে সংঘর্ষের নজির রয়েছে।
ওই কর্মকর্তারা বলেন, দিন দিন জেলা পুলিশের সঙ্গে সাধারণ মানুষের দূরত্ব বাড়ছে। পুলিশের সঙ্গে সাধারণ মানুষের দূরত্ব কমানোর জন্য জেলায় জেলায় কমিউনিটি পুলিশিং চালু করা হলেও সেখানে ক্ষমতাসীন দলেও নেতাকর্মী বা সমর্থকদের আধিক্য বেশি। বর্তমানে বেশির ভাগ জেলার পুলিশ সুপার ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এ পরিচয়ে তারা জেলায় এসপির দায়িত্ব পেয়েছেন।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা যায়, বিসিএস ২০তম ব্যাচের মধ্যে সিলেটের এসপি নূরে আলম মিনা, যশোরের এসপি আনিসুর রহমান, কুমিল্লার এসপি টুটুল চক্রবর্তী, ময়মনসিংহের এসপি মাইনুল হক, নরসিংদীর এসপি রফিকুল ইসলাম, মানিকগঞ্জের এসপি বিধান ত্রিপুরা, বরিশালের এসপি হিসেবে এহসান দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া ১৮তম ব্যাচের পরিতোষ চক্রবর্তী ফেনীতে এবং রুহুল আমিন দিনাজপুরের এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একই ব্যাচের আরও দুজন কর্মকর্তা গোপালগঞ্জ ও রাজবাড়ী জেলায় দায়িত্ব পালন করছেন। ১৭তম ব্যাচের খন্দকার মুহিত নারায়ণগঞ্জ, আবদুল বাতেন গাজীপুর, হাফিজুর রহমান চট্টগ্রাম ও হাবিবুর রহমান ঢাকা জেলার এসপি হিসেবে কাজ করছেন। ১৫ ব্যাচের তিন কর্মকর্তা জামালপুর, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক ইসমাইল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার বিষয়টি বিবেচনা করেই জেলায় পুলিশ সুপারের পদায়ন করানো উচিত। ঢালাওভাবে রাজনৈতিক পরিচয় প্রধান নিয়ামক হলে এবং দক্ষ এবং অভিজ্ঞদের বাদ দিয়ে একই ব্যাচ থেকে পুলিশ সুপারের পদায়ন ঐতিহ্যবাহী এই বাহিনীর জন্য ভালো দৃষ্টান্ত নয়। এসব কর্মকর্তা নিজেদের ক্ষমতাসীন দলের লোক ভাবা শুরু করবেন।