আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গুপ্তহত্যা বন্ধে যা যা করা দরকার সরকার তাই করবে। এই হত্যা কারা করাচ্ছে? এর অর্থ কারা দিচ্ছে, উৎসাহ কারা দিচ্ছে আর কারা এই ঘটনাকে নিয়ে সরকারের ব্যর্থতা দেখছে। সরকার যদি বিএনপির প্রকাশ্যে মানুষ হত্যা মোকাবিলা করতে পারে আর তা বন্ধ করতে পারে তাহলে গুপ্ত হত্যাও আমরা বন্ধ করতে পারব ইনশাল্লাহ। কেউ রেহাই পাবেনা, ক্ষমা পাবে না। খুঁজে খুঁজে বের করা হবে।
আজ দুপুরে গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ ও দলের ২০তম জাতীয় কাউন্সিল উপলক্ষে গঠিত উপ-কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সভার শুরুতে শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলীয় নেতাকর্মীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুপ্তহত্যার জন্য বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে দায়ী করে বলেন, দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে গুপ্ত হত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। বিএনপির রাজনীতি লুটপাটের ও দুর্নীতির রাজনীতি। মানুষ হত্যা করার তাদের রাজনীতি। জনগণকে সম্পৃক্ত করে নয়, বরং জনগণকে হত্যা করে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল বিএনপি। তিনি বলেন, গুপ্তহত্যা বন্ধ করা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
দেশের জনগণের কাছে আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারা এর সাথে জড়িত তা চিহ্নিত করতে। কারণ দেশের মানুষ একে অপরকে চেনা খুব কঠিন না। আমার দেশের মানুষকে কেউ যখন আঘাত করবে তখন কেউ দাড়িয়ে দাড়িযে দেখবেন না। আপনারা এক জোট হয়ে সেটাকে প্রতিরোধ করবেন। তিনি বলেন, আমরা আপনাদের সাথে থাকবো এবং আমাদের আইশৃঙ্খলা বাহিনী আপনাদের সাথে থাকবে। যখন তারা হত্যা করে পালাতে চেষ্টা করবে তখন রাস্তার মানুষ তাদেরকে ধরবেন এবং প্রতিহত করতে চেষ্টা করবেন। ঠিক যেভাবে করেছেন ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত করেছিলেন সেইভাবে এদের প্রতিরোধ করতে হবে। এদেরকে আমরা খুঁজে বের করবই এরা যাবে কোথায়। এই অপরাধের সূত্রটা কি, অর্থটা কাদের, কাদের মদদে এই কাজগুলো করছে। সেই সূত্রগুলিও আমরা বের করব। অলরেডি কিছু কিছু সূত্র আমি পাচ্ছি এবং সেগুলি এক সময় বের হবে। আমি দেখেছি, বিএনপি নেত্রী বলেছেন যে আওয়ামী লীগ খুন করছে কিন্ত খুন করার অভ্যাস তো আমার নাই তার আছে। কারণ তারা আমাকে খুন করার জন্য বারবার চেষ্টা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিচ্ছি। মানুষ উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীর বিচার করছি, তখন বিএনপি নেত্রী বাধা দিতে চায়। যেসব যুদ্ধাপরাধী তিনি মন্ত্রী বানিয়েছিলেন, তাদের যুদ্ধাপরাধীর হিসেবে ফাসি হচ্ছে, এতে তার ভাল লাগছে না। অন্তরে জ্বালা ধরেছে। তাই তিনি প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছে। তারা বাংলাদেশের উন্নয়ন চায় না। আমরা বিশাল বাজেট দিয়েছি, পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের মিথ্যা অপবাদ দিতে চেয়েছিল, আমরা চ্যালেঞ্জ করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু কাজ করছি। উন্নয়নের মহাসড়কে দেশ। বিশ্বের রোল মডেল। এখন সেই উন্নয়নে বাধাগ্রস্ত করার জন্য গুপ্তহত্যাসহ নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শান্তিপূর্ণ দেশ। এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না। যারা প্রতিবন্ধতা সৃষ্টি করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। সকল ধর্মের মানুষ তাদের ধর্ম পালন করছে। কিন্তু বেছে বেছে মসজিদের ইমাম, গির্জার ফাদার, প্যাগোডার পুরোহিতসহ বিশেষ ব্যক্তিদের হত্যা করে কী ম্যাসেজ দিতে চায় তারা? যেন আন্তর্জাতিকভাবে চাপ বাড়ে?
সভার শুরুতেই শেখ হাসিনা তার কারাবন্দী জীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, বিনা ওয়ারেন্টে আমাকে ১৬ জুন গ্রেফতার করা হয়। তার একদিন পর আমার সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়। তারপর একের পর এক মামলা দেয়। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নিয়েছিল বিএনপির কাছ থেকে। সাধারণত দেখা, যে সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা নেওয়া হয়, তাদের ওপর ক্রোধ থাকে-আক্রোশ থাকে। তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ভিন্ন হয়েছিল। আমরা ২০০১ সালের পর আর ক্ষমতায় ছিলাম না। তারপরও আমাকে গ্রেফতার করা হলো। তিনি বলেন, আমি যখন দেশের বাইরে ছিলাম, তখন আমার নামে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মামলা দেয়। আমি মামলা মোকাবিলায় দেশে আসতে চাইলে তারা বার বার বাধা দেয়। আমাকে বিমানে আসতে দেওয়া হয়নি। লন্ডনে জোর করে বিমানে উঠলেও বলা হয়, দেশে নিয়ে গিয়ে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে যাওয়া হবে। তবে সেদিন বিমানবন্দর থেকে সুধাসদন পর্যন্ত হাজার হাজার দলীয় নেতাকর্মীরা থাকায় তা করতে পারেনি। পরবর্তীতে আমাকে গ্রেফতার করা হলো, অসুস্থ স্বামীকে থাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হলো। তিনি বলেন, ওয়ান ইলেভেনে তৃণমূলের নেতার্কীরা এবং ঢাকা শহরের নেতাকর্মী-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা আন্দোলন জোরদার করায় আমাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় আমাকে শর্ত দেওয়া হয়েছিল, নির্বাচন করবেন । আপনাকে প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হবে। আমি তাদের বার বার একটা কথাই বলেছি, আমি রাষ্ট্রপতির মেয়ে, প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে ছিলাম। নিজেও প্রধানমন্ত্রী ছিলাম। তোমরা কিসের প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা দেবে? একটি বাড়ি-গাড়ি তাই? এগুলো আমার দরকার নাই, নির্বাচন দাও, জনগণ চাইলে আমি প্রধানমন্ত্রী হব, না চাইলে নাই। তিনি বলেন, তারপর নির্বাচনে জনগণ ভোট দিয়েছিল এবং ২০১৪ সালের শতবাধা পেরিয়ে পুনরায় নির্বাচিত করায় আমরা উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজা রাখতে পারছি। যত বাধাই আসুক, সুনিদিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগুলো তা একদিন অর্জন হয়।
বিডি-প্রতিদিন/ ১১ জুন, ২০১৬/ আফরোজ