প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মতো দক্ষিণ এশিয়ায়ও বিস্তৃতি লাভ করেছে। যা আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য হুমকি স্বরূপ। নিরাপত্তা সহযোগিতার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়াকে একটি শান্তিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ অঞ্চলের দেশগুলো একসঙ্গে কাজ করতে পারে। ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিকভাবে আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মূলে পরস্পর পরস্পরকে সহায়তা করছি। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে বাংলাদেশের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপে বিশ্ব নেতারা ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
সংসদের বাজেট অধিবেশনের বুধবারের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী তিনি এসব কথা বলেন। ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী সরকার দলীয় সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের লিখিত এবং জাতীয় পার্টির নূর ই হাসনা লিলি চৌধুরীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, দ্বিপাক্ষিকভাবে ভারতের সাথে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাদির মাধ্যমে আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মূলে এবং নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে পরস্পর পরস্পরকে সহায়তা করছি। এ ধারাবাহিকতায় ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা ও কার্যক্রম অব্যাহত আছে। কাজেই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে নিরাপত্তা বিষয়ে বিভিন্ন বিশেষায়িত প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্ষেত্রভিত্তিক সুনিদিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ এমন এককটি বিষয় যে কোন আন্তর্জাতিক ফোরামের যেকোন আলোচনায় সেটা আন্তর্জাতিক হোক, আর দ্বিপাক্ষিক হোক, সব সময় উঠে আসে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের সরকারের যে জিরো টলারেন্স ও কঠোর অবস্থান তা বিশ্ব নেতারা জানেন। জি-৭ সম্মেলনে আমার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও অনানুষ্ঠানি কথা প্রসঙ্গে জঙ্গি সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের যে পদক্ষেপে তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বিশ্ব নেতারা। সকলের সহযোগিতায় জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস দমনে সফল হবো বলে আমরা আশা করি।
বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর দেওয়া রাষ্ট্রীয় ভোজসভায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সর্বপ্রথম দক্ষিণ এশিয়ার জন্য আঞ্চলিক কূটনীতির যে ধারণা তুলে ধরেন, তাতে দক্ষিণ এশিয়াকে একটি দারিদ্রমুক্ত শান্তিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত হয়েছে। এ ধারণার ওপর ভিত্তি করেই শুরু হয় বাংলাদেশের আঞ্চলিক কূটনীতিক যাত্রা। তারই ধারাবাহিকতায় দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে বাংলাদেশ।
শহিদুজ্জামান সরকারের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি এদেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করছি। আমার কাজের মূল্যায়ন বিশ্ব নেতারা করেছেন। এজন্য বাংলাদেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানাই। তারা ভোট দেয় নির্বাচন করেছে বলেই আমি এই কাজ করতে পারছি। দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনি বলেন, আমার সাম্প্রতিক সৌদি আরব সফর অত্যন্ত সফল হয়েছে। আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে সম্মান পাচ্ছি সেটি আমার একার নয়, বাংলাদেশের ও বাংলাদেশের জনগণের সম্মান।
ব্যাংক সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা হবে
কামাল আহমেদ মুজমদারের (ঢাকা-১৫) এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি পন্যের মূল্য প্রতিযোগিতামূলক করার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় উচ্চ ব্যাংক সুদ হার। ব্যাংক সুদ হারকে সিঙ্গেল ডিজিট-এ নামিয়ে আনার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে ব্যাংক সুদ হার যাতে দেশের রপ্তানি মূল্যের উপর কোন বিরুপ প্রভাব না ফেলে সেজন্য ৮ শতাংশ হারে প্রি-ও পোস্ট শিপমেন্ট ঋণ প্রদান অব্যাহত রাখা হয়েছে। নগদ অর্থে ও প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে রপ্তানি পন্যের অধিক পরিমাণ কাঁচামাল আমদানির সুবিধা সৃষ্টির লক্ষ্যে এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড ১দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার-এ উন্নীত করা হয়েছে এবং এর সুদের হার মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ। বন্ড সুবিধাকে অধিকতর সম্প্রসারিত করা হচ্ছে।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৫ জুন, ২০১৬/ আফরোজ