গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক এলাকার ট্যাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানায় শনিবার সকালে বয়লার বিস্ফোরণে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুনের তীব্রতায় চারতলা ভবনের প্রায় পুরোটাই ধসে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা কারখানা ছাপিয়ে আশপাশের বাসাবাড়ি, গোডাউন ও কারখানায় ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। এতে অন্তত ৩০ জন নিহত ও শতাধিক শ্রমিক ও পথচারী আহত হয়েছে। আহতদের টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও উত্তরার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
খবর পেয়ে টঙ্গী, জয়দেবপুর, ঢাকার কুর্মিটোলা ও আশুলিয়া ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট চেষ্টা চালিয়ে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পুরোপুরি আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। এঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের ডিডি বদিউজ্জামানের নেতৃত্বে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে শোকের মাতম শুরু হয় স্বজনদের মাঝে।
প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসীরা জানায়, আজ শনিবার সকাল পৌনে ৬টার দিকে কারখানার নিচতলায় মূলফটকের পাশে স্থাপিত বয়লার বিস্ফোরণের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুর্হূতের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা কারখানায় রক্ষিত ট্যাবলেটের স্ট্রিপ, পটেটো চিপস ও বিস্কুটের ফয়েলপ্যাক তৈরির বিভিন্ন কাঁচামাল ও কেমিক্যালের ড্রামে ছড়িয়ে পড়ে। ঈদের আগমুহূর্তে প্রায় শতাধিক নারী-পুরুষ শ্রমিক ওই কারখানায় রাতভর কাজ করছিলেন। হঠাৎ আগুন লাগার খবর শুনতে পেয়ে হতভম্ব হয়ে পড়েন এবং দিগদ্বিদিক ছুটোছুটি করতে থাকেন। আটকে পড়া শ্রমিকরা হুড়োহুড়ি করে বের হতে গেলে আগুনে পুড়ে কারখানার শিফট ইনচার্জ সুভাষ চন্দ্র দাস, ইদ্রিস আলী(৪০), আল মামুন (৪০), নিরাপত্তাকর্মী জাহাঙ্গীর আলম (৫০), দেলোয়ার হোসেন, আব্দুল হান্নান, শ্রমিক জাহিদুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, রফিকুল ইসলাম, মো.এনামুল হক, সোলায়মান, আনিছুর রহমান, শংকর সরকার, ওয়ালি হোসেন, মাঈন উদ্দিন, সাইদুর রহমান, হাসান সিদ্দিকী, রোজিনা, শিশু আশিক, গোপাল দাস, আ. রাশেদ, অজ্ঞাতসহ ঢামেক হাসপাতাল ও বেসরকারি ক্লিনিকে অন্তত ৩০ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন শতাধিক শ্রমিক ও পথচারী ।
টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পারভেজ হোসেন বলেন, ওই কারখানার বিস্ফোরিত বয়লারের টুকরার আঘাতে ও আগুনে দগ্ধ হয়ে ১৯ জনের লাশের নাম ঠিকানা হাসপাতালে নথিভুক্ত হয়েছে। তাছাড়া আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত ৩০জনকে ঢামেকে পাঠানো হয়েছে আর ৭ জন রোগী আমাদের হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
এব্যাপারে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক লে. কর্নেল মোশারফ হোসেন প্রেস ব্রিফিংকালে বলেন, ব্রয়লার বিস্ফোরণে কারখানায় এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে। বয়লারটি কারখানার মূল ফটকে থাকায় বিস্ফোরণে দেয়াল ধসে পড়ায় এবং কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলীর কারণে শ্রমিকরা বের হতে পারেনি। বিকাল ৫টা পর্যন্ত আমরা ২৩টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছি। এছাড়াও বেশ কয়েকজন দেয়ালচাপা পড়ে আছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদের ২৫টি ইউনিট কাজ করছে।
গাজীপুর সিটি মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ বলেন, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও এলাকাবাসী আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। ঈদের আগ মুহূর্তে এমন ঘটনা খুবই বেদনাদায়ক।
বিডি প্রতিদিন/১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬// এনায়েত করিম/ আফরোজ