সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি পাঠানপাড়া এলাকা। পাশাপাশি দুইটি সবুজ ভবন। একটি পাঁচতলা, অপরটি চারতলা। উস্তার আলীর মালিকানাধীন এই বাসা দু’টির নাম ‘আতিয়া মহল’। ভবন দুইটির ৪২টি ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন শতাধিক ভাড়াটে। ভাড়াটেদের কোলাহলে মূখর থাকতো আতিয়া মহল। কিন্তু গত একসপ্তাহ ধরে আতিয়া মহলের চিত্রভিন্ন।
ভেঙে পড়েছে পাঁচতলা ভবনটির সবুজ দেয়াল। কোথাও উড়ে গেছে ভবনের পিলারের অংশ বিশেষ। সেনাবাহিনীর প্যারাকমান্ডদের চারদিনের জঙ্গি বিরোধী অভিযানে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে আতিয়া মহল। সবুজ দেয়াল ভেঙে বের হওয়া লাল ইট যেন ভবনের কঠিন রক্তক্ষরণের কথাই বলে দিচ্ছে।
পুলিশ বেষ্টনিতে থাকা আতিয়া মহলের ভেতর এখনো পড়ে আছে দুই জঙ্গির লাশ। ভবনের ভেতর বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় বিধ্বস্ত এই ভবন এখন হয়ে ওঠেছে ভয়ংকর।
গত ২৪ মার্চ জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরুর আগ থেকেই আতিয়া মহলের সামনের রাস্তা ও আশপাশ এলাকায় যানবহন এবং মানুষের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় এলাকার গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে রাস্তা খুলে দিয়েছে পুলিশ।
গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগও পুন:স্থাপিত করা হয়েছে। ফলে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে এলাকার মানুষের মধ্যে। তবে এখনো আতিয়া মহলটি বিস্ফোরকমুক্ত না হওয়ায় এলাকার মানুষের মধ্যে ভবনটি ঘিরে উদ্বেগ-আতঙ্ক রয়েছে।
অভিযান শেষে প্রেসব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনী ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে বলেছিল, অভিযান চলাকালে বিস্ফোরণ ও গুলিতে ভবনটি নড়বড়ে হয়ে গেছে। ভেতরে জঙ্গিরা যে বিস্ফোরক রেখে গেছে তা অনেক শক্তিশালী। কোন কারণে বিস্ফোরণ ঘটলে ভবনটি ভেঙে পড়ে যেতে পারে।
নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আতিয়া মহলের চারতলা বাসার বাসিন্দাদেরও ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। আতিয়া মহলের সামনের আরেকটি পাঁচতলা ভবনের বাসিন্দাদের সরিয়ে দিয়ে সেটি তালাবদ্ধ করে রেখেছে পুলিশ। এছাড়া বিস্ফোরকের কারণে শুক্রবার পর্যন্ত ভবনটি থেকে দুই জঙ্গির লাশ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। লাশ পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এলাকায়।
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার জেদান আল মূসা বলেন, ‘অভিযানের শুরু থেকে আতিয়া মহলের চারপাশে যান ও জন চলাচলে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা তুলে নেয়া হয়েছে। এলাকায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। এখন মানুষ অনেকটা স্বস্তিতে রয়েছে।’
ভবনের ভেতর থেকে বিস্ফোরক অপসারণ ও লাশ উদ্ধারের ব্যাপারে জেদান আল মূসা বলেন, ‘সেনাবাহিনীর বোমা নিষ্ক্রিয় দল এসে আতিয়া মহলের বিস্ফোরক সরানো কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে তারা এসে ভবনটি রেকি করে গেছে। তবে শুক্রবার পর্যন্ত তারা অভিযানে নামেনি। কখন তারা বিস্ফোরক উদ্ধার অভিযানে নামবে এ ব্যাপারে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। বিস্ফোরক সরানোর পরই ভেতরে থাকা দুই জঙ্গির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হবে।’
প্রসঙ্গত, জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে গত ২৩ মার্চ (শুক্রবার) দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টার দিকে আতিয়া মহল ঘিরে ফেলে পুলিশ। পরদিন ২৪ মার্চ পুলিশের সাথে অভিযানে যুক্ত হয় র্যাব, সোয়াত ও সেনাবাহিনী। সবশেষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সেনাবাহিনীর প্যারাকমান্ডোরা চালায় অভিযান। চারদিনের অভিযানে ভবনের ভেতর নিহত হয় এক নারীসহ ৪ জঙ্গি।
বিডি-প্রতিদিন/০১ এপ্রিল, ২০১৭/মাহবুব