ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সম্মেলনে একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের হস্তক্ষেপ প্রতিরোধের খসড়া প্রস্তাব নিয়ে বিপরীত অবস্থান নিয়েছে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ। যেখানে উন্নত দেশগুলোর জোট গ্রুপ-১২প্লাস এ খসড়া বাতিলের দাবি জানিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো এ প্রস্তাবটি পাসের পক্ষে সমর্থন দিয়েছে।
রবিবার আইপিইউ'র ১৩৬তম অ্যাসেম্বলির দ্বিতীয় দিনে একটি দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের হস্তক্ষেপ প্রতিরোধে সংসদের ভূমিকা নিয়ে একটি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয় এবং আগামী মঙ্গলবার এ বিষয়ে একটি রেজ্যুলেশন ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে খসড়া প্রস্তাব সমর্থন করে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যা যার মাধ্যমে ৩০ লাখ মানুষ মারা গেছে এবং দুই লাখ নারীকে অসম্মান করা হয়েছে সেটির কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ এটিকে সমর্থন করে। বাংলাদেশ অন্য দেশের কোনও বিষয়ে নাক গলানোকে সমর্থন করেনা। ’তিনি আরও বলেন, ‘শুধুমাত্র বিশেষ পরিস্থিতিতে যদি খুব প্রয়োজন পড়ে তবে জাতিসংঘের ম্যান্ডেট নিয়ে ইন্টারফেয়ার করা যেতে পারে। ’
গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কোনও সরকারকে কোনও মিলিটারি বা অন্য যেকোনও শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে উৎখাতের চেষ্টাকে এ খসড়া প্রস্তাবে চরম নিন্দা জানানো হয়। এছাড়া অন্য দেশের অন্যদেশের হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে সুশীল সমাজ যাতে ভূমিকা রাখে তার জন্য সংসদকে উৎসাহিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে এ খসড়া প্রস্তাবে।
এ বিষয়ে দিপু মনি বলেন, ‘অনেক দেশ এনজিও’র মাধ্যমে নাক গলানোর চেষ্টা করে। এটি বন্ধ করতে হবে। প্রায় এক বছর আলোচনার পর এ রেজ্যুলেশনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু একটি বেশ কয়েকটি দেশ এ খসড়ার বিরোধিতা করে এটিকে বাতিল করার প্রস্তাব করেছে। তবে ভারত এ রেজ্যুলেশন সমর্থন করে। ’
এ খসড়া সমর্থন করে চীন জানিয়েছে, বিদেশী শক্তি এবং এর প্রভাব গ্রহণযোগ্য নয়। ২০০৩ সালে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের অজুহাত দেখিয়ে একটি দেশ ইরাক আক্রমন করেছিল কিন্তু পরে দেখা গেছে সেখানে এ ধরনের কোনও অস্ত্র নেই। এছাড়া রাশিয়া এ খসড়া সমর্থন করে জানিয়েছে, এটি বাতিল করা হলে সারা বিশ্বে একটি ভুল বার্তা যাবে।
গ্রুপ-১২প্লাস জোটে মোট ৪৭টি সদস্য দেশ এ খসড়ার চরম বিরোধিতা করছে। এ জোটের সদস্য জার্মানি জানিয়েছে, ইতিহাসে শত শত নাক গলানোর উদাহারণ আছে এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে নাক গলাতে হয়। তাই এ খসড়া বাতিল করা উচিত। একই সুরে কথা বলেছে ইউক্রেন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড ও তুরস্ক।
এ খসড়াটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গত কয়েকবছর ধরে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তান ক্রমাগত নাক গলিয়ে যাচ্ছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে এ বিষয়ে পাকিস্তানের সরকার ও তাদের জাতীয় ও প্রাদেশিক সংসদগুলো বিভিন্ন ধরনের বিবৃতি দিয়েছে ও রেজ্যুলেশন গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের সরকার এবং সুশীল সমাজ এর চরম বিরোধীতা করেছে।